তৃতীয় বর্ষ রাইস প্রো-টেক এক্সপো শুরু হল বর্ধমানের কল্পতরু মাঠে। ৩দিন ব্যাপী এই মেলার শুক্রবার উদ্বোধন করলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আগামী বছর তথা চতুর্থ এই এক্সপো শিলিগুড়িতে করার প্রস্তাব দেন খাদ্যমন্ত্রী। কিন্তু গত ৩ বছর ধরে চলে আসা তথা বিগত ২ বছরের এক্সপোর পর ফলাফল কি? এই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াতে লাগল গোটা এক্সপো জুড়ে। 

মূলত, বাংলার রাইসমিলগুলিকে আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করাতেই এই এক্সপোর আয়োজন করা হয়। ফলে পাঞ্জাব সহ অন্যান্য রাজ্য থেকে বিভিন্ন মেশিন প্রস্তুতকারক সংস্থা এই এক্সপোতে হাজির হন। কিন্তু শেষ ২ বছর তথা ৩ বছরের হিসাব অনুসারে অগ্রগতি মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। খোদ বেঙ্গল রাইস মিলের রাজ্য কার্য্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক বক্তব্য রাখতে গিয়ে জানিয়েছেন, জিএসটি এবং নোট বন্দির ফল এখনও তাদের ভুগতে হচ্ছে। তাঁরা কিছুতেই উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। স্বাভাবিকভাবে সাঁড়াশি আক্রমণে এখন রাইস মিল শিল্পে নাভিশ্বাস উঠেছে। এমতবস্থায় সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। 

বস্তুত, আব্দুল মালেকের এদিনের এই উক্তিই রাজ্যের মোট ১৪০০ রাইস মিলের বাস্তব পরিস্থিতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আর অন্যদিকে, আগত বিভিন্ন মেশিনারী প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির বক্তব্য, বাংলায় এই সমস্ত মেশিনারী প্রয়োগের যথেষ্ট ক্ষেত্র রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মিল মালিকরা এগিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন। মেশিন প্রস্তুতকারী এই সমস্ত সংস্থাগুলিকে এই এক্সপোতে নিয়ে আসা একটি সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পাঞ্জাব সহ কয়েকটি রাজ্যে একর প্রতি হিসাব করা হয় ফসল উৎপাদনের। তুলনায় বাংলা অনেক পিছিয়ে। 

তিনিও জানিয়েছেন বাংলায় টাকার অভাব নেই – কিন্তু মিলারদের মানষিকতার পরিবর্তন হয়নি। সেই পুরনো ধ্যান ধারণাতেই তাঁরা রয়ে গেছেন। ফলে মিলগুলির আধুনিকীকরণ করা বা সেগুলিতে নতুন মেশিনপত্র লাগানোর বিষয়টিতে তাঁরা খুব বেশি এগিয়ে আসতে পারছেন না। কার্যত, পরিস্থিতির এই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন বর্ধমান জেলা রাইস মিলস্ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মণ্ডলও। তিনি জানিয়েছেন, পাঞ্জাব দেশের মধ্যে কৃষি উৎপাদনে সব থেকে এগিয়ে। তার কারণ সেখানকার চাষীদের মধ্যে রয়েছে ঐক্যের একটি শক্ত চেহারা। 

তিনি জানিয়েছেন, পাঞ্জাবে এক লপ্তে অনেকটা জমি মেলে। চাষীরা চাষের সুবিধার্থে নিজেদের জমির অবস্থান পরিবর্তন করে নেন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই। ফলে মেশিনের ব্যবহারে সুবিধা মেলে। কিন্তু বাংলার বুকে সেই সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, বাম আমলেই বাংলার কৃষি জমিকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয় প্রথম। এই যুক্তি দেখিয়ে যে ছোট ছোট জমি হলে চাষের সুবিধা হবে চাষীদের। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বাম তাত্ত্বিক নেতারা। 

বাম আমলের শিল্পমন্ত্রী প্রয়াত নিরুপম সেন বর্ধমানের টাউন হলে একাধিক সভায় এব্যাপারে বলেছেন, কৃষিতে যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতেই হবে। সেজন্য জমিকে বড় করা দরকার। কার্যত, এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি বলেই জানিয়েছেন, এক্সপোতে আসা বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানিয়েছেন, চাষীদের যেমন অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে - তেমনি রাইস মিলারদেরও এই বিষয়ে ভাবতে হবে - নাহলে চালের উৎপাদন যেমন বাড়বে না তেমনি উন্নতিও হবে না।

Find out more: