সংবাদ-মাধ্যমে বহু চর্চিত-আলোচিত বহিস্কৃত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিল দিল্লির আদালত । সেই সঙ্গে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছেন বিচারক । কিন্ত তাঁর ফাঁসির দাবিতে বিজেপির মহিলা সাংসদ নীরব কেন তা জানা গেল না ? কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার যে অপরাধ করেছেন তার নজীর ভারতের অপরাধের ইতিহাসে খুব কমই আছে । তা সত্ত্বে বিজেপির মহিলা ব্রিগেড কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার নিয়ে নীরব থাকায় প্রশ্ন উঠেছে । কয়েক দিন্নেআগে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মেক ইন ইন্ডিয়া নয় , রেপ ইন ইন্ডিয়া বলে কটাক্ষ করেছিলেন মোদী সরকারকে । তা নিয়ে রে রে করে তেড়ে এসেছিলেন স্মৃতি ইরাণি-লকেট চ্যাটার্জিরা কিন্ত কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের ক্ষেত্রে তারা নীরব কেন ? তাহলে ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকর্মী হলে স্মৃতি ইরাণিদের কাছে তারা ক্ষমার যোগ্য । আর যারা এনিয়ে কটাক্ষ করবেন তারাই অপরাধী !
শুক্রবার দুপুর ২টোয় দিল্লির তিসহাজারি কোর্টে সেঙ্গারের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক ধর্মেশ শর্মা। গত সপ্তাহে এই মামলার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজার আবেদন করেছিল সিবিআই। তবে সেঙ্গারের আইনজীবীর আর্জি ছিল, যাবজ্জীবন নয়, ১০ বছরের সাজা দেওয়া হোক তাঁকে। এ দিন সাজা ঘোষণার সময় সেই আর্জি খারিজ করে বিচারকের মন্তব্য, “জনপ্রতিনিধি হিসাবে মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন সেঙ্গার।” আদালতের মতে, উন্নাওয়ের ওই ধর্ষিতাকে নানা ভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন সেঙ্গার।আজীবন কারাবাস ছা়ড়াও বিপুল অঙ্কের অর্থ জরিমানা করা হয়েছে সেঙ্গারের। এক মাসের মধ্যে সেই টাকা দিতে না পারলে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে নির্দেশ আদালতের।
২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে ১৭ বছরের এক কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে সেই অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বলেও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের। সেই সঙ্গে সেঙ্গারের ভাই অতুল সেঙ্গারের বিরুদ্ধে নির্যাতিতার বাবাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়তে থাকে। আরও অভিযোগ, গুরুতর আহত ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালের বদলে ভুয়ো অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার দু’দিন পর পুলিশি হেফাজতেই মৃত্যু হয় নির্যাতিতার বাবার। এর পর সুবিচারের দাবিতে লখনউতে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকারি বাসভবনের সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই কিশোরী। তাতেই যেন নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ওই মামলার অভিযোগ নথিবদ্ধ করা হয়।
উন্নাও-কাণ্ড ঘিরে প্রবল জনরোষের মুখে এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেঙ্গার ও তাঁর ভাই-ছাড়া আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। চলতি বছরের জুলাইতে নির্যাতিতা ও তাঁর দুই আত্মীয়া একটি পথ দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। ঘটনায় তাঁর ওই দুই আত্মীয়ার মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম হন নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী। ওই ঘটনাতেও সেঙ্গারের হাত রয়েছে বলে দাবি করে নির্যাতিতার পরিবার। ওই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈইকে চিঠি লেখেন উন্নাওয়ের ওই নির্যাতিতা। গত অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উন্নাও-সহ মোট পাঁচটি মামলা লখনউ থেকে দিল্লির আদালতকে হস্তান্তর করে। সে মাসেই বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয় চার বারের বিধায়ক সেঙ্গারকে। ৯ অগস্ট সেঙ্গার এবং শশী সিংহের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা সিবিআই। ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপহরণ ছাড়াও পকসো (প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইনে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে।
শুনানির সময় বিচারক ধর্মেশ শর্মার এজলাসে ওই অপরাধের জন্য তাঁর আজীবন কারাবাসের আবেদন করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী অশোক ভারতেন্দু। তবে কুলদীপের আইনজীবী তনভীর আহমেদ মিরের আর্জি ছিল, কুলদীপের সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা হোক। তাঁর বক্তব্য ছিল, “রাজনৈতিক কেরিয়ারে কোনও দাগ নেই সেঙ্গারের। ২০০২ থেকে আজ পর্যন্ত বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।” তবে আদালত যাতে সেঙ্গারকে যাবজ্জীবন কারাবাস দেয় তার আর্জি জানায় সিবিআই। সিবিআইয়ের মতে, “এটি এ ধরনের জঘণ্য অপরাধের জন্য নির্যাতিতাদের আর্তি।” তবে এ দিন সেঙ্গারের কোনও আর্জিই কাজে আসেনি।