‘ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেস’(আইএইচসি)-এর সভায় নজীরবিহীন বিশৃঙ্খলা দেখ দিল । সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ছাত্ররা প্রস্তত্ত হয়ে এসেছিল । তবে কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের বির্তকিত বক্তব্যের জেরে আরও বেশি বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । শেষ পর্যন্ত রাজ্যপাল ভয় , হুমকি দিয়ে বিক্ষোভকারীদেরকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন । আরিফ মহম্মদ খানের উদ্বোধনী বক্তব্য মাঝপথে থামিয়ে দিতে বাধ্য হন । আজ কেরলের কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেস’ সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
শনিবার হিস্ট্রি কংগ্রেসের উদ্বোধন করতে গিয়ে  সিএএ ও এনআরসি-র সমর্থনে সওয়াল করতে শুরু করেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। এখানেই শেষ নয় , আরিফ সাহেব দেশভাগ এবং কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন । তাঁর বক্তব্য ‘উত্তেজক’ বলে পাল্টা অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। অধিবেশনের সভাপতি ঐতিহাসিক ইরফান হাবিবকে দেখা যায় রাজ্যপালের বক্তব্যের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করতে । আর এতেই বিক্ষোভকারীরা আরও বেশি উত্তেজক হয়ে ওঠে । সভাপতি ইরফান হাবিব রাজ্যপালকে বক্তব্য শেষ করার অনুরোধ জানালে তিনি তা শেষ করতে চাননি ।
আরিফ খান তাঁর বক্তব্যে টেনে আনেন সিএএ ও কাশ্মীর প্রসঙ্গ। বলেন, মহাত্মা গাঁধী এবং জওহরলাল নেহরু দেশভাগের পর পাকিস্তানে থাকা অ-মুসলিমদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা সিএএ পূরণ করেছে। এর পরই রাজ্যপাল বলতে থাকেন, ‘‘দেশ ভাগের জন্য কেরল ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এখানকার মানুষের সহমর্মিতা রয়েছে। এমনকি তাঁরা কোনও বিষয় না জেনেই প্রতিবেশী যখন প্রতিবাদ দেখান তখন তাতে যোগ দেন। দেশ ভাগ উত্তর ভারতের মানুষের ভাবনায় আঘাত দিয়েছিল।’’ পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যু জিইয়ে রাখতে চায় বলেও এ দিন মন্তব্য করেন তিনি।
সিএএ ও এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন পড়ুয়া প্রতিনিধিদের একাংশ। রাজ্যপালের এই বক্তব্যে আগুনে ঘি পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, জওহরলাল নেহরু ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিরা। তাঁরা রাজ্যপাল আরিফ খানের বক্তব্য ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ বলেও অভিযোগ করতে থাকেন। সেই সঙ্গে সিএএ ও এনআরসি বিরোধী স্লোগানও দিতে থাকেন তাঁরা। প্ল্যাকার্ড দেখিয়েও প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
এর পরেও বক্তৃতা চালিয়ে যেতে থাকেন রাজ্যপাল। কিন্তু, বাধা পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। রাজ্যপালকে মঞ্চ থেকেই বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনারা যখনই বিতর্ক ও আলোচনার জন্য দরজা বন্ধ করে দেবেন তখনই আপনারা হিংসার সংস্কৃতি তৈরি করবেন।’’ বিক্ষোভকারীরা আলোচনা করতে ভয় পাচ্ছে বলেই এগিয়ে আসছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজ্যপাল যখন দেশভাগ প্রসঙ্গ টেনে বক্তৃতা করছেন তখন তার প্রতিবাদ জানান আইএইচসি-র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইরফান হাবিবও। কিন্তু, রাজ্যপাল বক্তৃতা থামাতে অস্বীকার করেন। উল্টে হাবিবের উদ্দেশে জানান, কাশ্মীর ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য থামানোর কোনও অধিকার নেই। হাবিব ‘সালিশি’ করার চেষ্টা করছেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন আরিফ খান।
রাজ্যপালের রোষ থেকে বাদ যাননি বিক্ষোভকারীরাও। তাঁদের উদ্দেশে একের পর এক তোপ দাগতে থাকেন ক্ষুব্ধ আরিফ খান। বিক্ষোভ চালিয়ে গেলে তাঁদের ওই জায়গা থেকে বার করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বার বার অভিযোগ করতে থাকেন, বিক্ষোভকারীরা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই আইএইচসি-তে ঢুকেছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করতে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দেখা দেয় তুমুল উত্তেজনা। ওই ঘটনায় চার পড়ুয়াকে আটক করা হয়েছে।
কন্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসের ৮০ তম অধিবেশন আজ থেকে শুরু হয়েছে । এর উদ্বোধন করেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান । তিনি ইতিহাস কংগ্রেসের অধিবেশনের উদ্বোধন করতে সিএএ ও এনআরসি প্রসঙ্গ টেনে আনেন। এখানেই আপত্তি ওঠে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা প্রতিনিধিদের । এরপরেই তিনি দেশভাগ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন আরিফ । ফলে তা বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন অধিবেশনের সভাপতি ইরফান হাবিব । এনিয়ে বচসা শুরু বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে প্রতিনিধিরা । তারপর পুলিশ আসে রাজ্যপালকে বক্তব্য থামিয়ে দিতে হয় ।

Find out more: