বাংলার একজন বড় অভিনেতা অকালে চলে গেলেন । তাপস পালের মৃত্যু নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক । তিনি জীবনের একটা সময়ে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন । আলিপুর থেকে বিধায়ক হন । কৃষ্ণনগর থেকে দুবারের সাংসদ । অভিনেতা হিসাবে তিনি যত বড় মাপের, রাজনীতিবিদ হিসাবে তিনি ততটা ছিলেন না । রোজভ্যালী মামলায় জেলে যাওয়ার পর তাপস পাল রাজনীতি থেকে এক প্রকার সন্ন্যাস নিয়েছিলেন । শুধু তাই নয়, তাঁর নিজের লোকসভা কেন্দ্রের এক রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করে ফেলেছিলেন তা নিয়ে জোর হইচই পড়ে যায় । তারপর কার্যত তিনি দলেও এক ঘরে হয়ে পড়েন । এরপরেই তাঁর জেলযাত্রা । জেল থেকে জামিন পাওয়ার পর দীর্ঘদিন তিনি কোখায় ছিলেন কেউ জানেন না । গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যুর খবর সংবাদ মাধ্যমে আসার পরেই তাপস পালের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে সাধারণ মানুষ। কারণ বিগত কয়েক বছর ধরে তাপস পালের খবর তাঁর দলের নেতাদের জানা ছিল না বলেই সূত্রের খবর ।
তাপস পাল চলে গেলেন । গভীর বেদনা নিয়ে । বেঁচে থাকাকালীন সময়ে জীবনের শেষ কটা দিন বন্ধুহীন হয়ে ছিলেন । পাশে কেউ ছিল না । তাঁর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তাতেও তৃণমূলের বিধায়ক ও সাংসদ ছিলেন একথাটাও লেখা হয়নি । অর্থাৎ তাঁর দলীয় পরিচয় দেওয়া হয়নি । কিন্ত আজ এই মহান অভিনেতার শেষকৃত্যের দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে দায়ী করলেন তাপসের মৃত্যুর জন্য । শুধু তাপস নয় , প্রাক্তন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদের মৃত্যুর জন্য মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি । এদিকে তাপস পালের শেষকৃত্যকে আভিজাত্যের মোড়কে দেওয়া হয়েছে । রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে । এটা হতেই পারে । কারণ তাপস পাল একজন অভিনেতা-সাংসদ ছিলেন ।


কিন্ত সুলতান আহমেদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন চোখের জল ফেলছেন তখনই প্রশ্ন ওঠে কেন সুলতানকে নিঃশব্দে চলে যেত হল ? তাঁকে কী রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া যেত না ? রাজ্য সরকার ইচ্ছা করলেই তা করতে পারতেন ? কেন করলেন না ? সুলতান আহমেদ রাজনীতিবিদ হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতি ছিল । শুধু বাংলায় নয় , সমগ্র দেশজুড়ে তাঁর পরিচিতি ছিল । কিন্ত দুঃখের হলেও সত্য সুলতান আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ কেন বিধানসভা গেল না , কিংবা তৃণমুল ভবনে গেল না ? তা আজও জানা যায়নি । মনে রাখতে হবে সুলতানের আহমেদের প্রতি এই প্রতিবেদকের আলাদা কোনো ভালাবাসা নেই । তাঁকে সম্মান জানানো কেন হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা বা এক্তিয়ার কোনোটাই আমার নেই । তবে প্রশ্ন অবশ্যই করা যেতে পারে । অনেককেই যখন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয় তাহলে সুলতানকে কেন দেওয়া হয়নি ?
এপ্রসঙ্গে আমরা জানতে চেয়েছিলাম প্রাক্তন সাংসদ ও বর্ষীয়ান আইনজীবী সরদার আমজাদ আলীর কাছে । তিনি সুলতানকে খুবই স্নেহ করতেন । সুলতানের মৃত্যুতে তিনি শোকাহত হয়েছিলেন । তাই এই প্রসঙ্গ তুলতেই আমজাদ সাহেবের জবাব , আজ যাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হল তার নাম তাপস পাল , যাকে সম্মান দেওয়া হয়নি তিনি হলেন সুলতান আহমেদ। যিনি এর কারিগর তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সুলতানকে কেন মর্যাদা দেওয়া হয়নি সেটা তিনিই ভাল বলতে পারবেন । এটা শুধু একজন প্রতিবেদকের বক্তব্য নয় , এটা সমগ্র বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের মনের কথা ।

Find out more: