প্রাথমিক শিক্ষকদের বিক্ষোভে উত্তাল শহর কলকাতা । সরকারি বিজ্ঞপ্তি মেতাবেক শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না এমনকি তাদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বুধবার মিছিল করল কয়েক হাজার প্রাথমিক শিক্ষক । উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে এই মিছিল হয় । মিছিলের অভিমুখ ছিল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি । উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের মিছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে বাঘাযতীন পর্যন্ত মিছিল যাওয়ার পর আন্দোলনকারীরা রাস্তার উপরে বসে পড়েন । ফলে যাদবপুর-গড়িয়ার মধ্যে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বুধবার দুপুর থেকেই। তার জেরে চূড়ান্ত ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দারা। বন্ধ রয়েছে যানচলাচল। কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা বলতে পারছেন না পুলিশ কর্তারাও।
প্রাথমিক শিক্ষকরা রাস্তা অবরোধ করেছেন শুনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আলোচনার জন্য ওই শিক্ষকদের তাঁর বাড়িতে ডেকে পাঠান। তিন জনের প্রতিনিধি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনাও হয়। পরে ওই প্রতিনিধি দলের তরফে জানানো হয়, তাঁদের কথা শুনলেও এ বিষয়ে কোনও সমাধান সূত্র বেরোয়নি। এ বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁরা কি দাবি করছেন, সেটা ওঁদের ব্যাপার। সরকার সাধ্যমতো বেতন বৃদ্ধি করে বিবৃতি জারি করেছে। ওঁদের যদি কিছু বলার থাকে, লিখিত ভাবে জানান নির্দিষ্ট জায়গায়। এর পরেও বেতন বৃদ্ধি করা যায় কি না অর্থ দফতরের সঙ্গে কথা বলে দেখব। কিন্তু, রাস্তায় বসে এ ভাবে হঠাৎ হঠাৎ আন্দোলন ঠিক নয়। মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট মানবিক। ওঁদের জন্য যথেষ্ট করা হয়েছে।’’
বেতন কাঠামো নিয়ে সরকারের তরফে সঠিক আশ্বাস না মেলা পর্যন্ত রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোডে বিক্ষোভ চলবে বলে এ দিন সকালেই জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। রাস্তা আটকে চলে বিক্ষোভ। এ দিন সন্ধ্যাতেও সেই বিক্ষোভ চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাতে না যায় সে কারণে মোতায়ন করা হয়েছে পুলিশও। বিক্ষোভকারীরা যাতে আর এগোতে না পারেন সে জন্য রাস্তার উপরে ব্যারিকেড করা হয়েছে। তৈরি রাখা হয়েছে জল কামান।’’
লোকসভা ভোটের আগে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মতলায় প্রেস ক্লাবের কাছে অনশনে বসেছিলেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। দীর্ঘ আন্দোলনের পর শেষ পর্যন্ত রাজ্যের তরফে বেতন বৃদ্ধি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কিন্তু এই বেতন বৃদ্ধিতে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। ফলে ফের তাঁরা আন্দোলনের পথে হাঁটলেন বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সরকার যে ভাবে বেতনক্রম বাড়ানোর কথা বলেছিল, তা হয়নি। গ্রেড পে–এর সঙ্গে পে ব্যান্ডও পরিবর্তন হবে বলে দাবি করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেসিক গ্রেড পে-তে মাত্র ৩০০ টাকা বেড়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে বাস্তবে অনেকের বেতন কাঠামো মিলছে না। বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিয়ে নতুন করে সমাধান না হলে ফের অনশনের পথে তারা হাঁটবে বলে জানানো হয়েছে ‘উস্তি ইউনাই়টেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে।