চারদিন পরেও বেঙ্গালুরু থেকে পাঠানো কথিত বাংলাদেশীদের ভবিষ্যত কী তা জানা গেল না ? ধৃত ৫৯ জনের প্রকৃত পরিচয় জানতে চেয়ে বাংলাদেশ উপদুতাবাস রাজ্য সরকারের কাছে নথি চেয়েছে । এই অবস্থা এই ৫৯ জন মানুষ কোথায় থাকবেন কী খাবেন তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে রাজ্য প্রশাসন । তাদের অবস্থা কী হবে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া গেল না । উল্টে বেঙ্গালুরুতে ২৬ দিন আটক থাকার পর, এ বার হাওড়াতে কড়া পুলিশি নদরদারিতে আটক হয়েই রইলেন তাঁরা।
নবান্ন সূত্রে খবর, কর্নাটক সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল ওই ৫৯ জনকে রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘কর্নাটক সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছিল, তারা সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছে। রাজ্য পুলিশ ওই ৫৯ জনকে তুলে দেবে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে।”
কিন্তু ওই ৫৯ জন পৌঁছনোর পর সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাননি রাজ্য পুলিশের কর্তারা। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রাখার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সীমান্ত শাখার।” সেই সমন্বয়ের অভাবে রেল পুলিশের উপর দায়িত্ব পড়ে ওই ৫৯ জনকে রাখার। পুলিশ সূত্রের খবর, এত জনকে রাখার মতো কোনও ব্যবস্থা রেল পুলিশের ছিল না। হাওড়া কমিশনারেটের হাত ঘুরে গোটা বিষয়টি পৌঁছয় হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা সোমবার দাবি করেন, সাংসদ জানিয়েছিলেন ইডেনে পিঙ্ক বল টেস্ট দেখতে বাংলাদেশের অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করতে। জেলা প্রশাসনের অন্য এক কর্তা বলেন, ‘‘ফোনটা এসেছিল সন্ধ্যায়। তড়িঘড়ি বালি জগাছার ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার অসিত বরণ ঘোষ নিশ্চিন্দা থানার ইনস্পেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে ওই স্বনিযুক্তি কেন্দ্রে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করেন।” ওই স্বনিযুক্তি কেন্দ্রের তিন তলার ছ’টি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বালিশ-বিছানা খাবার সবই বন্দোবস্ত করা হয় ব্লক প্রশাসনের তরফে। পরে রাতে ওই ৫৯ জন পুলিশ প্রহরায় আসার পর জানা যায় আসল ঘটনা। ৫৯ জনকে এক বাড়িতে ধরানো যায়নি। ফলে ওই এলাকার আরও একটি জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রায় ২০ জনের।
অন্য দিকে নবান্ন সূত্রে খবর, বাংলাদেশ উপদূতাবাসও খোঁজ নেওয়া শুরু করেছে গোটা বিষয় নিয়ে। উপদূতাবাস সূত্রে খবর, তাঁদের কাছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের চিঠি আসে। সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশ্যে আসে ‘পুশ ব্যাক’ বিষয়টি। এ নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করতেই কর্নাটক সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে যে চিঠি দিয়েছিল তা ফরওয়ার্ড করা হয়েছে উপদূতাবাসকে। ফলে যাঁদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশি কি না তা খতিয়ে দেখবেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরাও। সেই সঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের পক্ষে ‘পুশ ব্যাক’-এর বিরোধিতা করে চিঠি দেওয়া হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকেও। এ দিন অসিত বরণ ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন এপিডিআর-র অধিকার কর্মীরা। সংগঠনের সহ সম্পাদর আলতাফ আহমেদ বলেন, ‘‘কোনও আদালতে পেশ না করেই, তাঁদের অপরাধ বিচার না করেই, এক মাস ধরে বিভিন্ন ভাবে এঁদের পুলিশ হেফাজতেই রাখা হচ্ছে। এটা পুরোটাই মানবাধিকার লঙ্ঘন।” অধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন, গত কয়েক মাস ধরে অত্যন্ত গোপনে কয়েকশো মানুষকে এ ভাবে জোর করে সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তের ওপারে তাঁদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে গ্রেফতার করে জেলে ভরছে বাংলাদেশ সরকার। ফলে এই মানুষদের অস্তিত্ব সঙ্কটে। তবে সব কিছুর মধ্যে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের চিন্তা একটাই, আরও ক’দিন ‘অতিথি’-দের দায় বহন করতে হবে।
অক্টোবর মাসের বিভিন্ন সময়ে ওই ৫৯ জন বাংলাভাষীকেই বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি হিসাবে চিহ্নিত করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তাঁদের সেখানকার একটি হোমে ২৬ দিন আটক করে রাখা হয়। তার পরই সরকারি স্তরে স্থির করা হয় ওই আটকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে যাকে প্রশাসনিক পরিভাষায় বলে ‘পুশ ব্যাক’। ২২ নভেম্বর ওই ৫৯ জনকে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রশান্ত নিলয়ম স্টেশন থেকে হাওড়াগামী ট্রেনের একটি আলাদা কোচে বেঙ্গালুরু পুলিশের ৪০ জনের নজরদারিতে রওনা করা হয়। পরের দিন হাওড়া স্টেশনে ট্রেন পৌঁছলে বেঙ্গালুরু পুলিশ রাজ্য সরকারের রেল পুলিশের হাতে তাঁদের তুলে দেয়।