দূরদর্শন, অত্যাধুনিক সিনেমাহল, আইনক্স এবং ইন্টারনেটের রমরমার যুগেও মঞ্চাভিনয় নাটকের প্রতি নাট্যমোদী বাঙালির আকর্ষণ আজও বিদ্যমান। তার প্রমাণ পাওয়া গেল গত ২,৩,৪ ডিসেম্বর কলকাতা মানিকতলা রামমোহন লাইব্রেরির প্রেক্ষাগৃহে ইদানীং নাট্যগোষ্ঠীর আয়োজিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব – ২০১৯ এ। তিনদিনব্যাপী এই বিরাট নাট্য উৎসবে পশ্চিম বঙ্গ ও প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশ সহ মোট ৭টি নাট্য ও ১টি নৃত্যনাট্যের দল যোগ দেয়। কানায় কানায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে প্রথম দিন পরিবেশিত হয় ‘শিবপুর নাট্যানিক’ এর রোমিও দাস নির্দেশিত বাদল সরকার রচিত নাটক ‘হট্টমালার ওপারে’ ও ইদানীং নাট্যগোষ্ঠীর জয়ন্ত রসিক রচিত নির্দেশিত ‘ভূতের বাড়ি’, দ্বিতীয় দিন অঞ্জন হালদার নির্দেশিত ‘সাকো নাকতলা’ প্রযোজিত মনোজ মিত্রের ‘পাখি’, আমিনুল হক আমীন পরিচালিত বাংলাদেশ ঢাকার ‘মুক্তালয় নাট্যাঙ্গন’ প্রযোজিত শেখ আলাউদ্দিন রচিত নাটক ‘এ যুগের আলাদীন’ ও নৃত্য পটিয়সী শম্পা চৌধুরী মাইতি পরিচালিত হলদিয়া ‘শ্রীজন একাডেমি’র রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য’চিত্রঙ্গদা’ এবং তৃতীয় দিন পরিবেশিত হয় ‘ভবানীপুর চারণিক’ প্রযোজিত সুকুমার কর্মকার নির্দেশিত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহেশ’ এবং ইদানীং নাট্যগোষ্ঠীর জয়ন্ত রসিক রচিত পরিচালিত নাটক ‘সবার বাবা’।
‘মহেশ’ নাটকের একটি দৃশ্য
উল্লেখ্য প্রথমদিন এই নাট্য উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল ব্যতিক্রমী। বিশিষ্ট রাষ্ট্রপতি সম্মাননা প্রাপ্ত শতায়ু স্বাধীনতা সংগ্রামী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য, স্থানীয় মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার, দৈনিক সবার খবর পত্রিকার সম্পাদক কিঙশুক ভট্টাচার্য, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সহ-সভাপতি তাপস চট্টপাধ্যায়, ইদানীং নাট্যগোষ্ঠীর সভাপতি সবিতা বেগম, সম্পাদক জয়ন্ত রসিক, সহ-সম্পাদক শেখ আব্দুল মান্নানের উপস্থিতিতে দুটি সাদা পায়রা উড়িয়ে উৎসবের শুভ সূচনা করা হয়। এছাড়া নাটক পরিবেশনের পাশাপাশি মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্বাদের গান ও কবিতা আবৃত্তি ছিল নাট্যমোদী দর্শক শ্রোতাদের উপরি পাওনা। পরিবেশন করেন মনীষা চক্রবর্তী, তপতী গোস্বামী, মনোরমা পোল্ল্যে, শান্তি দেব ভট্টাচার্য, রূপালী বিশ্বাস, স্বপ্না দা ও বদরুদ্দোজা হারুন।
‘নৃত্যনাট্য চিত্রঙ্গদা’ র একটি দৃশ্য।
বিশিষ্ট সমাজসেবক সাহিত্যিক আফতাব উদ্দিন সরকার, একুশের ভাবনার সম্পাদক বদরুদ্দোজা হারুন, অভিনেতা আবৃত্তি শিল্পী সুখেন্দু শেখর ভট্টাচার্য, শিক্ষাবিদ শান্তিদেব ভট্টাচার্য ও বিশিষ্ট সমাজসেবী তপতী করের উপস্থিতিতে অঙ্শগ্রহনকারী প্রতিটি নাট্যদলের কর্ণধারকে সুশান্তকর স্মৃতি সম্মাননায় সম্মানিত করা হয়। তিনদিনের মনোমোহক এই নাট্য-উৎসব সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সুচারু রূপে সঞ্চালনা করেন নাট্যকার জয়ন্ত রসিক ও গল্পকার শেখ আব্দুল মান্নান।