পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে একটি গ্রাম। নাম দত্ত দ্বারিয়াটন। অখ্যাত এই গ্রামেই রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটে। কালনা থেকে বৈচি যাওয়ার রাস্তায় বর্তমানে এই গ্রামে যাওয়ার জন্য বাস স্টপেজের নাম হাজরা পাড়া মোড়। কিন্তু কালনা শহরের আর তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে পর্যটনের মানচিত্রে স্থান করে দিতে স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু থেকে জেলা প্রশাসন, সর্বোপরি রাজ্য পর্যটন দপ্তর নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি জাঁকজমক ভাবে বিগত ৭ বছর ধরে শুরু হয়েছে পর্যটন উৎসবেরও।
তবু স্বামীজীর ১৫৭তম জন্মদিনেও রীতিমত উপেক্ষিত খোদ স্বামীজীর পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত পৈতৃক ভিটে। বাস স্টপেজের নাম স্বামীজীর নামে করাই হোক বা পর্যটন মানচিত্রে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ন এই স্থানের অন্তর্ভুক্তি - আজও কোনোটাই হয়নি। এমনকি ওই ভিটে তেই একটি ছোট্ট ঘরে বর্তমনে স্বামীজীর মূর্তি রাখা থাকলেও, তাতে বছরের এই জন্মদিনটাতেও একটা মালা পরে না বলে অভিযোগ। যদিও পর্যটনের নিরিখে এই স্থানের গুরুত্ব অপরিসীম বলেই মত প্রকাশ করেছেন ইতিহাসবিদরা।
উল্লেখ্য, বেশকয়েক বছর আগে কালনা শহরের বহু মানুষের বাসিন্দা উদ্যোগে,আর্থিক সহায়তায় এবং কালনা ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি প্রণব রায়ের সহযোগিতায় বিবেকানন্দের একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি স্থাপন করা হয়। কালনার প্রবীণ সাংবাদিক তরুণ সেন,পল্লব ঘোষ জানিয়েছেন, এই মূর্তি কালনা শহরে তৈরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই স্থানে বসানোর জন্য। কিন্তু অযত্নে আর প্রাকৃতিক কারণে সেই মূর্তির ওপর রঙের প্রলেপ উঠে গিয়েছিল। এবছর তাঁদের উদ্যোগে নতুন করে আবার রং করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় ১২ জানুয়ারি দিনটিকে যুব দিবস ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর স্বামীজীর জন্মদিন উপলক্ষে এইদিনে প্রণব রায়ের উদ্যোগে সকালে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং স্বামীজীর মূর্তিতে মাল্যদানও করা হয়। কিন্তু খোদ পৈতৃক ভিটেতে যে ঘরে স্বামীজীর মূর্তি রাখা আছে, সেই জায়গা আজও অবহেলিত।
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ সর্বজিত যশ জানিয়েছেন, একসময় কালনার অদূরে দ্বারিয়াটন গ্রামে দত্ত পরিবারের বসবাস ছিল। ভুপেন্দ্রোনাথ দত্তর লেখা আমার কথা অমর কথা বইয়েতে সেই প্রসঙ্গের উল্লেখও আছে। যদিও পরবর্তীতে দত্ত পরিবার কলকাতা শহরে চলে যায়। গত ৪০-৪৫ বছর আগেও সেখানে একটি দোতলা বাড়ির ভগ্নাংশ ও একটি পাঁচিল ছিল। পরে এই দত্ত পরিবারের নামেই এই জায়গার নাম হয় দত্ত দ্বারিয়াটন।
জানা যায়, সেই সময় গ্রামে যাত্রা পালার প্রচলন ছিল। নটী বিনোদিনী নামে একটি যাত্রা পালার জন্য গ্রামের দত্ত পরিবারের বাড়ির এই অংশের পাঁচিল ভেঙে সমতল করা হয়েছিল। তারপর থেকে বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটে একপ্রকার ফাঁকাই ছিল। সর্বজিত বাবু জানিয়েছেন, বর্তমানে ওই স্থানে একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে স্বামীজীর মূর্তি রাখা আছে। তিনি জানিয়েছেন, স্বামীজীর পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানকে ঘিরে সৌন্দর্যায়ন, গ্রন্থাগার, প্রদর্শনী ভবন প্রভৃতি তৈরি করলে পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন। এব্যাপারে প্রশাসন কে উদ্যোগী হতে হবে।
পাশাপাশি এই দত্ত দ্বারিয়াটন গ্রামের অদূরেই বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু র। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই দত্ত পরিবার এবং স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থান কে কিভাবে আরও আকর্ষণীয় করে তুলে পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে রাজ্যে।
অন্যদিকে কালনা মহকুমা শাসক সৌরভ সুমন মহান্তি জানিয়েছেন, স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটে যাতে সংরক্ষণ ও রক্ষনাবেক্ষন করা যায় সে ব্যাপারে আর্কিওলজি বিভাগ কের কাছে আবেদন জানানো হবে।