সাতদিন টানা আন্দোলন চালানোর পর মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক ডাকেন জুনিয়র চিকিৎসকদের সাথে। সেখানে তিনি মন দিয়ে শোনেন তাঁদের অভিযোগ অনুযোগ এর কথা। দিয়েছেন উপযুক্ত পদক্ষেপএর আশ্বাস। ডাক্তারদের প্রতিনিধিরাও বলেন ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমার কথা। “লক্ষ্মী ছেলে” বলে স্নেহসম্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাস এর ভিত্তিতে এদিন সন্ধ্যে থেকেই জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দিয়েছেন। কর্মবিরতি উঠে যাওয়ার পর রাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মউলালির বেসরকারি হসপিটালে ভরতি থাকা আহত চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায় কে দেখতে যান।সেখানকার চেয়ারম্যান রবিন সেনগুপ্ত জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সামনেই পরিবহর সাথে কথা বলেন।তাঁর কোনরকম অসুবিধা হচ্ছে কিনা বা ভবিষ্যতে কোন অসুবিধা হতে পারে কিনা জানতে চান । এ দিন সকাল ও সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠান থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়,পরিবহ ভালো আছেন ।অস্ত্রপ্রচারের পর ট্রমা আর সামান্য উদ্বেগ ছাড়া আর কোন শারীরিক সমস্যা নেই ।হাসপাতাল পরিচালকগন মনে করছেন আগামী চার পাঁচ দিনের মধ্যেই পরিবহ সেখান থেকে মুক্তি পাবেন।
বৈঠকের দিন সাড়ে তিনটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর দফতরের কনফারেন্সে পৌঁছে যান জুনিয়র ডাক্তারদের ৩১ জন প্রতিনিধি।স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য,ও দুই প্রবীণ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় ও অভিজিৎ চৌধুরী,মুখ্যসচিব,স্বাস্থ্যসচিব,ডিজি,এডিজি,কোলকাতা পুলিশ কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিকেল ৪ টেই বৈঠক শুরু করেন লাইভ এ। এইদিন বৈঠকের বেশিরভাগ আলোচনা ছিল নিরাপত্তা নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের নানান অভিজ্ঞতা এবং প্রস্তাব। প্রথমেই মেডিকেল কলেজ এর অরচিস্মান ভট্টাচার্য বলেন, “বাধ্য হয়েই, অনিচ্ছা স্বত্বেও আন্দোলনে যেতে হয়েছে। সাধারণ মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে ,কিন্তু আমরা নিরুপায়। আমরা কাজে ফিরতে চাই।নির্ভয়ে কাজ করতে চাই।হামলাকারীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।আপনার উপর প্রবল আস্থা রয়েছে”।
এদিন চিকিৎসকেরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন হাসপাতালের গোলমালে রাজনৈতিক অভিযোগ ।রুগীর মৃত্যু হলে কেন জুনিয়র ডাক্তারদের জবাবদিহি করতে হবে,প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর মতানুযায়ী, “রুগীর মৃত্যু হলে পরিজনদের মাথার ঠিক থাকেনা। তাঁদের সঠিকভাবে খবরটা জানানো সম্ভব হয়না।হাসপাতালগুলিতে তিন শিফটে জনসংজগকারী নিয়োগ করতে হবে”।সবকিছু নির্বিশেষে সবাই যাতে হাসপাতালের নিয়ম মানতে বাধ্য থাকার জন্য পুলিশ কে নির্দেশ দেন।ডাক্তারদের দাবি অনুযায়ী এনআরএস এ আসার প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন “আমি নিজে থেকেই যাই,আমার ওপর ছেড়ে দাও।কখন কোথায় যাব তোমরা বোল না”।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের মতানুযায়ী এরপর থেকেই অচলাবস্থা কাটিয়ে চালিকাশক্তি হয়ে ওঠেন তিনি।চিকিৎসকদের কিছু দাবি তিনি মেনে নিয়েছেন আবার কিছু খারিজ ও করেছেন।এদিন তিনি সকলকে আশ্বস্ত করে বলেন , ডাক্তারদের কারো বিরুধ্যে মামলা করা হয়নি।ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা আমাদের ভবিষ্যৎ।কেন মামলা করব”? সমাজকে দৃঢ় বার্তা দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোন দৃঢ় শব্দ চাইছ জানাও, তাই বলব”।
স্বাস্থ্য সঙ্কট কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়াছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী সহ সকল রাজ্যবাসী।