আমরা অনেকেই জানি আমাদের আসে-পাশে এমন কিছু মানুষ আছেন যাঁরা বিরল রোগে আক্রান্ত, এবং সেই রোগের কোনও চিকিৎসা হয়তো নেই। নিম্যান পিক ডিজিজ টাইপ সি (NPC) এমনই একটি বিরল বংশানু বা জীন ঘটিত (জেনেটিক) রোগ যেখানে শরীরের অভ্যন্তরীণ কোলেস্টরল এবং অন্যান্য ফ্যাটি অ্যাসিডের অবক্ষয়, পরিবহনের ক্ষমতা ও ব্যবহার জন্মগত ভাবে থাকে না। এর ফলে শরীরের নানান অঙ্গে (যেমন মস্তিষ্কে) জমা হয় এই চর্বিবহুল পদার্থগুলি।
এই অত্যন্ত পরিবর্তনশীল রোগটি যে কোনও বয়সের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে এবং একই পরিবারের সদস্যের মধ্যে এই রোগটির উপসর্গের নানাবিধ রকমফের দেখা গেছে। এখনও পর্যন্ত এই রোগের কোনও চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি, তবে গোটা পৃথিবীব্যাপী এর গবেষণা চলছে।


NPC রোগটির উপসর্গ মারাত্মক এবং এর প্রকাশ জন্মের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে হতে পারে; আবার বেশ কিছু গবেষণায় এর বিলম্বিত সূত্রপাত হতেও দেখা গিয়েছে। এই রোগটির বৈশিষ্ট্য হল এটি দীর্ঘকাল স্থায়ী এবং ক্রমবর্ধিষ্ণু হয়। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণগুলি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে অনীর্ণনিয় হয়ে থাকতে পারে।
বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগটি ধরা পড়ে বাল্য বয়সে এবং এর প্রাণহানিকারক প্রভাব দেখা দেয় জীবনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দশকে। আমরা আমাদের গবেষণায় এই রোগটির প্রধান প্রোটিন 'এন পি সি ওয়ান' কে লক্ষ্য করেছি কারণ 'এন পি সি ওয়ান' এর মিউটেশনের ফলে এই জেনেটিক রোগটি হয়। এবং এই প্রোটিনটির কার্যকরী 'অ্যাক্টিভ সাইট' খুঁজে বার করেছি। এরপরে নানাবিধ 'লাইগ্যান্ড' (একটি অণু যা অপর একটি অণুকে আবদ্ধ করে) দিয়ে এই অ্যাক্টিভ সাইটে বসানোর চেষ্টা করেছি। এর ফলে আমরা দেখতে পেয়েছি যে 'লুপেনোন' স্থায়ী বন্ধনের মাধ্যমে প্রোটিনটির সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারছে এবং সর্বাধিক 'বাইন্ডিং এনার্জি' তৈরি করছে।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি আমরা কম্পিউটেশনাল বায়োলজির মাধ্যমে প্রমাণ করেছি 3D স্ট্রাকচারের ওপর ভিত্তি করে। সম্প্রতি আমাদের গবেষণাটিকে মার্কিন যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল তাদের এক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে  তৃতীয় স্থানে সম্মান জানায় এবং আমাদের গবেষণার একটি পোস্টার সেখানে উপস্থাপিত হয়।


এই ধরণের গবেষণার গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী। এই গবেষণাটি আমাদের নিম্যান পিক ডিজিজ সম্বন্ধে এক নতুন দিশা দেখালো যা ভবিষ্যতের গবেষণাকে আরও উদ্বুদ্ধ করবে। ডাক্তার এবং বৈজ্ঞানিকরা যাঁরা এই গবেষণায় কাজ করেছেন, তারা প্রত্যেকে আশাবাদী যে ভারতে সঠিক পরিকাঠামো এবং সরকারি সহায়তা পেলে এই ধরনের "মেডিকেল ইনোভেশন" উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

ডা. প্রিয়দর্শিনী ভট্টাচার্য্য, ইন্টার্নাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল এবং ওয়েস্ট সাফোক হাসপাতাল, ইউকে

Find out more: