মাত্র ২৬ সপ্তাহেই সে দেখেছিল পৃথিবীর আলো। সাধারণত যাকে
চিকিৎসা পরিভাষায় সম্পূর্ণ পুষ্ঠ বলাই যায় না। সেই শিশুকেই দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর শুধুমাত্র যে মায়ের কোলে চিকিৎসকরা তুলে দিলেন তাইই নয়, এখন সেই শিশুর বয়স ২ মাস। সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক।
একেবারে পুজোর মুখে শিশুকে কোলে নিয়ে মা বাড়ি ফিরছেন – রীতিমত আনন্দে আত্মহারা এখন পাঁজা পরিবার। এ যেন সাক্ষাৎ অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা। বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব জেনেও চেষ্টা করে যাওয়া। চিকিৎসকদের আন্তরিক সেই সমবেত চেষ্টাই ফল দিয়েছে আজ।
বর্ধমানের বাসিন্দা স্বাগতা ঘোষ পাঁজা। তার স্বামী কাজ করেন আমেরিকায়। প্রসবের অনেক আগে যখন তিনি মাত্র ২৬ সপ্তাহের গর্ভবতী, তখনই একদিন আচমকাই তাঁর প্রসবের সম্ভাবনা দেখা দেয়। ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পড়েন পরিবারটি। এই অবস্থায় যার চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি হাসপাতলে রেফার করে দেন। হাসপাতাল থেকে জানানো হয় শিশুটিকে বাঁচানো কার্যত অসম্ভব। কোনরকমে মায়ের প্রাণ বাঁচতে পারে। এই অবস্থায় সাক্ষাৎ ভগবানের মতো এগিয়ে আসেন বর্ধমানের কয়েকজন চিকিৎসক।
বর্ধমানের একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে এই কঠিন ও জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়। তৈরি করা হয় বিরাট মেডিকেল বোর্ড। আট জন চিকিৎসক এতে যুক্ত ছিলেন। শেষমেষ স্বাগতা ঘোষের সন্তান প্রসব হয়।কিন্তু উৎকণ্ঠা কাটেনি তখনও বাবার। কারণ ওজন মাত্র ন'শো গ্রাম। এছাড়াও স্বাভাবিক প্রসবের ৩৮ সপ্তাহের অনেক আগে মাত্র ২৬ সপ্তাহে শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখেছে। ছিল অনেক ঝুঁকি অনেক খারাপ সম্ভাবনা। তবুও দীর্ঘ দু'মাস ধরে এই নতুন প্রাণকে টিকিয়ে রেখেছেন চিকিৎসকরা। এখন শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।
চিকিৎসক আসরাফুল মির্জা জানিয়েছেন, শিশুটি এখন বিপদমুক্ত, তার কোনো প্রাণসংশয় নেই। তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গও স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছে। তবে তার চিকিৎসা চলবে। খুশি মা স্বাগতা পাঁজা এবং বাবা সৌমেন্দু পাঁজা। বর্ধমান শহরের জগৎবেড়ের পাঁজা বাড়িতে খুশির ছোঁয়া।
এই বিরল চিকিৎসা করতে পেরে খুশি চিকিৎসকরাও। কলকাতা থেকে অনেক দূরে বর্ধমানে এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরে আনন্দিত তাঁরাও। চিকিৎসকদের দলে ছিলেন ডা. এস পি নাগ, ডা. দেবদূত ব্যানার্জি, ডা.এম এস রায়, ডা. সুদীপ্তা দাস, ডা. আসরাফুল মির্জা, ডা. সৌরভ কুমার, ডা. পল্লব মুখার্জী ও ডা. মেহেবুব আলম প্রমুখ।