মানুষ তার জীবন চক্রের মধ্যে দিয়ে শৈশব-কৈশোর-যৌবন পেরিয়ে সর্বশেষে বার্ধক্যে পা বাড়ায়। জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যু যেমন অবধারিত তেমনি বেঁচে থাকলে প্রত্যেককেই বার্ধক্যে উপনীত হতে হবে। শুধু মানুষই নয় এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে জীবজন্তু ,গাছপালা সকলেরই বয়স বাড়ে বা বার্ধক্য আসে।মানুষের যত বয়স বাড়ে ততই অভিজ্ঞতা বেড়ে যায়।পরিবারের বয়স্ক মানুষকে গণ্য করা,মান্য করা,তাকে একটু গুরুত্ব দিয়ে তাকে একটু সময় দেওয়া আমাদের একান্ত কর্তব্য। বাড়িতে বয়স্ক মানুষ রয়েছে মানে পরিবারটি সুশীতল বটবৃক্ষের তলায় রয়েছে। কিন্তু আধুনিক যুগে প্রগতির উন্নতির সাথে সাথে বয়স্ক মানুষরা আমাদের কাছে বটবৃক্ষ নয় বোঝাস্বরূপ হয়ে উঠছে।
আমাদের এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার পিছনে বয়স্ক দের অবদান আছে। আমাদের জীবনে উন্নতি করার পিছনে তাঁরা তাঁদের জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন।আমাদের বড় করতে গিয়ে এমনও দিন গেছে হয়তো তাঁদের পেটে এক কণা দানা পর্যন্ত পড়েনি কিন্তু আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছেন।আজ তাঁরা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন বলে, তাদের শারীরিক ক্ষমতা কমে গেছে বলে তাদেরকে আমরা উপেক্ষা,অবহেলা করছি। আমরা ভুলে যাচ্ছি তাদের জন্য আমরা বড় হয়েছি জীবনে উন্নতি করেছি। আজ বয়সের ভারে তাদের শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে তাদের মেরুদণ্ড বেঁকে গেছে ঠিকই কিন্তু আমাদের মেরুদণ্ড সোজা করতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত এখন ব্যাস্ত।পাশের মানুষ টি কেমন আছে তার খবর রাখতে আমরা সময় পাই না।সময় আমাদের প্রতি মুহুর্তে মনে করিয়ে দিচ্ছে আমরা কতটা আত্মমগ্ন,কতটা আত্মকেন্দ্রিক।আমাদের এই আত্মমগ্নতার কারণে যে মানুষটি অসুখে -বিসুখে, সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে ছায়ার মতো আমাদের বড় করে তুলেছে সেই মানুষটি যখন অসহায় জীবন যাপন করছে তখন তার পাশে আমরা না দাঁড়িয়ে তাকে আমরা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আবার যে সমস্ত বয়স্ক মানুষরা ঘরে থাকছেন তাদের সঙ্গ দিতেও সময় পাচ্ছিনা।আমরা মনে করছি বয়স্ক লোকটির সঙ্গে গল্প করার থেকে বাইরে কিছুটা সময় কাটিয়ে এলে বা নেট দুনিয়া কিছুটা সময় অতিবাহিত করলে বেশি আনন্দ উপভোগ করব। ফলে ঘরে বসেও সবার সাথে থেকেও তাঁরা একাকিত্বে ভুগছেন।শুধু পরিবারের ক্ষেত্রেই নয়, বাইরের জগতে অর্থাৎ রাস্তাঘাটে চলার পথে অসহায় মানুষগুলোকে দেখে আমাদের করুণা হয় না।আমরা তাদেরকে দেখে এড়িয়ে যাই। বাসে,ট্রেনে উঠে বয়স্ক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমরা আনন্দ উপভোগ করি তাঁকে আমরা কেউ বসতে জায়গা ছাড়িনা।ব্যাংক,চিকিৎসালয়,রেশন দোকান কোনো জায়গায়তেই তাঁদের অসহায়তার কথা ভেবে আমরা তাঁদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করি না।
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে মানুষ এখন অনেক দিন বাঁচে।ফলে প্রবীণের সংখ্যা অনেক টাই বেশি ।সরকারের পক্ষ থেকে নানা খাতে টাকা দিয়ে তাঁদের সাহায্য করা হচ্ছে।
তাসত্ত্বেও মানুষের মনে সচেতনা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে তাঁরা আমাদের বোঝা নয়,আমাদের জীবনের অগ্রগতির প্রতীক। আমাদের সন্তানকে বোঝাতে হবে একদিন সেও বৃদ্ধ হবে তখন তাদের অবস্থা এরকম হবে। এখন থেকে যদি আমরা এই ধারণা শিশু দের মনে ঢোকাতে না পারি তাহলে আমাদের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ হবে।ব্যস্ততা সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলবে তাই সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন একান্তই প্রয়োজন।