জেলখানা আর জেলখানা নয়, এখন তা হয়েছে সংশোধনাগার। আর এবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গোটা রাজ্যের সমস্ত জেলখানা তথা সংশোধনাগারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের নিয়ে তৈরী হতে চলেছে বিশেষ গানের দল তথা ব্যাণ্ড। শনিবার বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে দুদিনের উইণ্টার কার্নিভ্যালের উদ্বোধন করতে এসে একথা জানিয়ে গেলেন রাজ্যের কারা দপ্তরের ডিজি অরুণ কুমার গুপ্তা।
এদিন এই কার্ণিভ্যালের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। এদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন কারা দপ্তরের ডিজি অরুণ কুমার গুপ্তা, ডিআইজি নবীন কুমার সাহা, জেলাশাসক বিজয় ভারতী, জেল সুপার আশীষ বণিক প্রমুখরাও। এদিন কারা দপ্তরের ডিজি অরুণ কুমার গুপ্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি গোটা রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারের বন্দিদের নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৮০জন অংশ নেয় সেই প্রতিযোগিতায়। তাদের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের পুরষ্কৃতও করা হয়। আর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের এই প্রতিভা দেখেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোটা রাজ্য জুড়ে এই প্রতিভাদের নিয়ে একটি গানের ব্যাণ্ড তৈরী করা হবে। এব্যাপারে যাবতীয় সহায়তা করবেন কারা দপ্তর।
অন্যদিকে, এদিন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই সমস্ত সংশোধনাগারে বন্দিদের বিভিন্ন হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাদের উৎপাদিত মাল বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রমশই বন্দিদের হাতের তৈরী বিভিন্ন দ্রব্য বাজারে সমাদর পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এব্যাপারে তাঁরা সংশোধনাগারের তৈরী পণ্যকে একটি ব্রাণ্ড নামে বাজারে পরিচিত করার চেষ্টা করছেন। খুব শীঘ্রই বন্দিদের তৈরী এই সমস্ত দ্রব্যকে নিয়ে তাঁরা বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এদিন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার প্রাঙ্গণে উইন্টার কার্নিভালে ১০টি স্টলে বন্দিদের তৈরী বিভিন্ন পণ্যকে বিপণনের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়াও বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মধ্যে বন্দিদের ফলানো বিভিন্ন ফসল বেগুন,পালংশাক,মূলো, ব্রকলি,টমেটো, মটরশুঁটি প্রভৃতিও বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন মন্ত্রী সহ অতিথিরা সেগুলি ঘুরেও দেখেন। জেলখানার বন্দিদের তৈরী মিহিদানা থেকে বিরিয়ানী প্রভৃতিরও স্টল দেওয়া হয়েছে। তারই মাঝে একটি খাবার স্টলে জিলিপিতে ক্ষতিকারক রং দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, এই জিলিপিতে মানুষের শরীরের ক্ষতিকারক হলুদ কেমিক্যাল রং দেবার বিষয়টি নজরে আসে কারা দপ্তরের ডিআইজি নবীন কুমার সাহার। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কিভাবে জেলখানার ভেতরে এই ক্ষতিকারক রং ঢুকলো এবং খাবারের সঙ্গে তা মেশানো হল দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জেলের কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, সম্ভবত কোনো ঠিকাদারকে মালের অর্ডার দেবার সময় তারাই না বুঝে এই রং দিয়েছে।
অন্যদিকে, এই কার্ণিভ্যালের অংশ নেওয়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা জানিয়েছেন, খোলা আকাশের নিচে সাধারণ মা্নুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে পেরে তারা খুশি। জানিয়েছেন, যে ঘটনায় তাঁরা সাজাপ্রাপ্ত সেই ঘটনাকে এখন তাঁরা ভুলেই যেতে চান। ফিরতে চান বাড়িতে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান। মেদিনীপুরের একটি খুনের ঘটনায় ২০১২ সাল থেকে জেলে রয়েছেন এক মহিলা। এদিন হাতের তৈরী বিভিন্ন পসরা নিয়ে তিনি হাজির ছিলেন একটি স্টলে। তিনি জানিয়েছেন, জেলখানায় থাকাকালীন তিনি এই হস্তশিল্পের কাজ শিখেছেন। জেল থেকে বেড়িয়ে গিয়ে তিনি এই কাজ করে জীবন পালন করতে পারবেন।
অন্যদিকে, কলকাতার ট্যাংরার বাসিন্দা মহম্মদ জাফরের ছিল ক্যাটারিং-এর ব্যবসা। সিপিএম তৃণমূল সংঘর্ষের একটি ঘটনায় একজন সিপিএম কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর যাবজ্জীবন হয়। বর্তমানে প্রায় ২ বছর ধরে তিনি বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে রয়েছেন। এই কার্ণিভ্যালে তিনি বিরিয়ানী তৈরী করেছেন। জানিয়েছেন, এখন তিনি সুস্থ জীবনে ফিরতে চান। বাকিদিনগুলি তিনি আর পাঁচ জনের মতই সুস্থ স্বাভাবিকভাবে কাটাতে চান।