মিটু শেষ পর্যন্ত গড়াল টলিউড পর্যন্ত। পরিচালক অরিন্দম শীলের বিরুধ্যে ক্ষোভ উদ্গিরন করলেন রুপাঞ্জনা মিত্র। তাঁর অভিযোগ, ইস্টার্ন বাইপাসের কাছে অরিন্দমের অফিসে স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনানোর অছিলায় তাঁর সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করেছিলেন পরিচালক। শুধু তাই নয়, ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনের মাধ্যমে তাঁকে কদর্য ইঙ্গিতও করেছিলেন অরিন্দম, জানিয়েছেন রূপাঞ্জনা।
রূপাঞ্জনা বলেন, “অরিন্দম পরিচালিত ‘ভূমিকন্যা’ সিরিয়ালের প্রথম এপিসোডের স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনার জন্য আমায় ওঁর অফিসে ডাকা হয়েছিল। মনে আছে, তখন পুজো আসছে আসছে এমন একটা সময়। সম্ভবত তৃতীয়া। বিকেল পাঁচটার সময় আমায় পৌঁছতে বলা হয়েছিল। সেই মতো অরিন্দমের অফিসে যেতেই দেখি অফিস ফাঁকা, শুধু প্রোডাকশনের ছেলে ছিল। বিকেল পাঁচটার সময় অফিস ফাঁকা দেখে প্রথমে একটু অস্বস্তি হয়েছিল। ঢুকতেই তিনি জিজ্ঞসা করেন, চা খাবি? চায়ের লোকটি চা দিয়ে যাওয়ার পরেই সেখান থেকে কায়দা করে তাঁকে সরে যেতে বলেন উনি। তখন অফিসে শুধু আমরা দু’জন। আমার ভীষণ আনক্যানি ফিল হচ্ছিল। আর ওঁর চেম্বারটা এমন ভেতরে যে চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পাবে না। হঠাৎই নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে ঘরেই একটা কাউচে এসে বসলেন। বলে বোঝাতে পারব না। ওঁর বসা, কথা বলা...ভীষণ ইঙ্গিতপূর্ণ। হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকছে।”
একটু থেমে রূপাঞ্জনা আবার বলা শুরু করলেন, “যখন সেই ব্যক্তি কাউচে বসতে গেলেন, যাওয়ার আগে আমার মাথায় হাত বুলোচ্ছেন...কখনও পিঠে। আমি ভগবানকে ডাকছি তখন। আরে বাবা, আমি তো নতুন মেয়ে নই। এতদিন ধরে কাজ করছি। সাইবাবাকে ডেকে চলেছি, কেউ একজন যেন চলে আসে। কিন্তু কেউ তো নেই। মনে হচ্ছিল এই বার বুঝি আমি রেপড হয়ে যাব। কেউ হাত-ফাত বুলিয়ে চলে যাচ্ছে...এরপর যে তিনি কী করতে পারেন সেটা হয়তো একজন মহিলার পক্ষে আন্দাজ করা খুব সহজ। আমি আর থাকতে না পেরে ওঁকে বেশ স্পষ্ট করে গোটা গোটা ভাষায় বলি, ‘‘অরিন্দমদা, প্লিজ টেল মি অ্যাবাউট দ্য স্ক্রিপ্ট। উনি বোধহয় তখন বুঝতে পারলেন, যে সব মহিলার সঙ্গে উনি সচরাচর এই ধরনের ট্রিক খেলে থাকেন আমি তাঁদের মধ্যে পড়ি না।”
রূপাঞ্জনার কথা অনুযায়ী, “এরপর আচমকাই ‘ডিরেক্টর মোডে’ চলে যান অরিন্দম। স্ক্রিপ্ট বোঝাতে শুরু করেন। এরপর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি জানিনা কী ভাবে, কোথা থেকে ওঁর স্ত্রী সেখানে উপস্থিত হন। আমাকে দেখে তিনিও অপ্রস্তুত। তিনি বোধহয় জানতেন না,তাঁর স্বামী সেই সময় আমাকে ওঁর অফিসে ডেকেছেন। আমাদের তিনজনের মধ্যে তখন অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। সেকেন্ডের মধ্যে বউভক্ত হয়ে গেলেন তিনি। যে মানুষটা কিছু ক্ষণ আগে আমায় নোংরা ইঙ্গিত করছিলেন তিনি হঠাৎ করে কী ভাবে স্ত্রীকে দেখে একদম পাল্টি খেয়ে গেলেন আমি বুঝতেই পারছিলামনা। এরপর আমাকে তিনি ড্রপও করে দেন। ওঁর কোনও একটা প্রিমিয়ারে যাওয়া ছিল। যদিও সেটার কোনও প্রয়োজন ছিল না।”
ওখান থেকে বেরিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু এত দিন চুপ ছিলেন কেন? রূপাঞ্জনা জানান, যে চ্যানেলে ‘ভূমিকন্যা’ সম্প্রচারিত হত সেই চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তিনি। যাতে চ্যানেলের ইমেজের কোনও ক্ষতি না হয় সে জন্যই এত দিন চুপ ছিলেন। তাঁর কথায়: “আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। ইন্ডাস্ট্রিতে রোজ নতুন নতুন মেয়েরা আসেন। তাঁরা যাতে ভবিষ্যতে ওই লোকটির থেকে সাবধান হয়ে যান সে জন্যই মুখ খুলেছি। অরিন্দম শীল একটি অত্যন্ত বদমাশ, বদ লোক। ওঁর মুখোশ খোলার সময় এসে গিয়েছে। তিনি আগেও আর এক অভিনেত্রীর সঙ্গে এমনটা করেছেন।”
তাঁর বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ শুনে পরিচালক অরিন্দম শীলের মন্তব্য: ‘‘এটা হয়তো পলিটিক্যাল স্টান্ট। আমি জানি না ও কেন এসব বলছে। এতদিনের বন্ধু ও আমার। যেদিনের কথা ও বলছে সে দিন অফিস থেকে বেরিয়ে ও আমায় টেক্সট করেছিল, আই অ্যাম সো এক্সসাইটেড। একসঙ্গে ওয়ার্কশপ করতে হবে কিন্তু। সেই টেক্সটও দেখাতে পারি আমি। ওঁর কথামতো যে ‘কুপ্রস্তাব’ দেবে তাকে কি ও আবার পাল্টা টেক্সট করবে? শুধু তাই নয়, ‘মিতিনমাসি’-র সময় আমি নিজে ওঁকে আমন্ত্রণ করেছিলাম। ও বলেছিল আসার চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে ও কেন এ সব মনগড়া কথা বলছে আমি সত্যিই জানি না। একজন মহিলা হঠাৎ করে কোনও পুরুষ সম্পর্কে যা কিছু একটা বলে দিল মানেই সেটা সত্যি হয়ে গেল? ও মিথ্যে বলছে।”