মূল্যবোধ আজকের সমাজ ব্যবস্থায় চলে যেতে বসেছে বলে অনেকেই মনে করেন। আর যাঁরা এই মূল্যবোধকে আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চান, তাঁরা সমাজের কাছে ব্রাত্য। তাঁদের গায়ে কখনও একগুঁয়ে, কখনও মাথা খারাপের তকমা দিতেও পিছপা হন না তাঁদেরই কাছের মানুষেরা। কারণ তাঁদের স্বার্থসিদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা মানুষগুলো। রমাপদ চৌধুরীর লেখা ‘ছাদ’-এর গল্প নিয়ে অনীক দত্ত চোখে আঙুল দিয়ে সমাজের দু’টো দিককে তুলে ধরেছেন অনবদ্য ভাবে। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন চিত্রনাট্যকার উৎসব মুখোপাধ্যায়। তাঁর লেখা সংলাপ মনে দাগ কাটে।
অনীক দত্ত পরিচালিত ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ দেখার পর প্রাথমিক অভিব্যক্তি, ‘বাহ! চমৎকার!’ কেন? এটি কি একটি রাজনৈতিক ছবি? নিটোল প্রেমের গল্প? সামাজিক, পারিবারিক দলিল?
পারিবারিক নিশ্চয়ই, খুব চেনা চৌহদ্দিতে একটি অধুনা, প্রায় অচেনা হয়ে যাওয়া মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের গল্প। তার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে প্রাত্যহিক জীবনের ভাল-মন্দ,সুখ-অসুখ, প্রেম-অপ্রেম।এতই চেনা, এত স্বাভাবিক যে. ছবি দেখতে দেখতে কোথাও ধাক্কা লাগে না,আরোপিত মনে হয় না কিছু।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় নিয়ে কথা বলার কোনও মানেই হয় না। পুরো ছবি তাঁকে ঘিরে। তাঁর যে আদর্শ, তা সন্তানরা (কৌশিক, ঋত্বিক) মেনে নিতে পারে না। এমন প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি নিজের অভিনয় দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন বন্ধুর চরিত্রে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে নিজের অভিনয়টা বজায় রেখেছেন পরাণবাবু। তাঁর সংলাপ বলার ধরনে সিনেমার গতি বেড়েছে। খুব কম সময় পর্দায় পাওয়া গিয়েছে মাধবী মুখোপাধ্যায়কে। সন্তানদের ঠিক মতো মানুষ করতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে শয্যাশায়ী বরণবাবুর স্ত্রীর চরিত্রে মাধবী মুখোপাধ্যায় অনবদ্য। অর্পিতা ছোট বউ মৌসুমী। মধ্যবিত্ত গৃহবধূ। আধুনিকা বড়জা বিদীপ্তা চক্রবর্তী, ননদ শ্রীলেখা মিত্র তাঁকে নিয়ে পিছনে হাসাহাসি করেন। কিন্তু তিনিই একমাত্র, যিনি শ্বশুরমশাইয়ের আদর্শে বিশ্বাসী। চরিত্রটিকে সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত করেছেন অর্পিতা। তাঁর ছেলের ভূমিকায় শিশুশিল্পী স্যমন্তক দ্যুতি মৈত্র। মায়ের আদুরে, দাদুরও। তাঁরা ছবিতে নয়, সত্যি যেন দাদু-নাতি। কৌশিক, শ্রীলেখা, ঋত্বিক, দেবলীনা প্রমুখদের যে দায়িত্ব পরিচালক দিয়েছিলেন, তাঁরা যথাযথভাবে তা পূরণ করেছেন। বিদীপ্তাকে ছবিতে অভিনেত্রী- গায়িকা হিসেবে পাওয়াটা উপরি পাওনা।