রায়গঞ্জের দক্ষিণ সোহারই গ্রামের পরিবেশ ও জাতীয় সড়কের পাশে থাকা একটি অনাথ আশ্রমের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছিল সাঁওতালি চলচ্চিত্র ‘আশা’। ‘আশা’ তৈরি হয়েছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক আদিবাসী কন্যার জীবনযুদ্ধের লড়াই নিয়ে। নিজে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন না হয়েও সেই ভূমিকায় অভিনয় করা সহজ কাজ নয়৷ প্রয়োজন হয় নিবিড় অনুশীলনের৷ সেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক আদিবাসী কন্যার চরিত্রটিকে অসামান্য দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন যিনি, তিনি পরিচিত ডগর টুডু নামে। পুরো নাম, ডগরমুনি টুডু। এই অভিনেত্রী এবং গায়িকার বয়স মাত্র ২২। সাঁওতালি এই শিল্পী-ই এখন শিরোনামে৷

'আশা'য় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আদিবাসী কন্যার চরিত্রে অভিনয় করে ডগর টুডু গুণীজনের নজর কেড়েছেন৷  দ্বাদশ দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২২-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ডগর টুডু। তবে এই পুরস্কারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কারের সম্পর্ক নেই। গত ২৯ এপ্রিল ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছিল ডগরের ‘আশা’। সেখানেও ডগরের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন দর্শকরা৷ পুরুলিয়ার মানবাজার-১ ব্লকের বাসিন্দা ডগর টুডুর জন্ম এক সাঁওতাল পরিবারে৷ পড়াশোনাকে কোনওদিনই অবহেলা করেননি৷ বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাঁওতালি ভাষায় স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেছেন। শুধু চলচ্চিত্রে অভিনয়ই নয়, সাঁওতালি গানও করেন ডগর। তাঁর বহু মিউজিক ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। বহু পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।


বাংলাদেশেও ডগরের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডগর এক জন সফল ইউটিউবারও। ইউটিউবের মাধ্যমে সাঁওতালি সমাজের সার্বিক উন্নয়ণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমাজসেবামূলক বহু প্রকল্পে কাজ করেছেন তিনি। লকডাউন পর্বে দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারকে দু’বেলা, দু’মুঠো তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে অসংখ্য কাজ করেছেন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, ডগর নিজের জগতে জনপ্রিয় হলেও টলিপাড়ার প্রথম সারির বহু পরিচালক, প্রযোজক এখনও তাঁর নামই শোনেননি। এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আদিবাসী কন্যার চরিত্রকে বাস্তবে ফুটিয়ে তুলে  ডগর টুডু যেভাবে গুণীজনের নজর কেড়েছে, তা কুর্ণিশযোগ্য।

Find out more: