৮ই নভেম্বর ২০১৬, দিনটি স্বাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন বলে বিবেচিত হবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এই দিনেই ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী ঠিক রাত ৮টা ১৫মিনিট নাগাদ ঘোষণা করলেন যে ৯ই নভেম্বর থেকে চালু ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট আর বৈধ নয়। সেই দিনটি কালো না সাদা তা নিয়ে আছে যুক্তি , পাল্টা যুক্তি। আছে অনেক পরিসংখ্যান আর আছে বিভিন্ন অর্থনৈতিক হিসেব নিকেশের বেড়াজাল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আপামোর ১২০ কোটির দেশ কে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, কালো টাকার কারবারীদের জব্দ করার , স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এক নতুন ভারত গড়ার, দিশা দেখিয়েছিলেন
এক চাঙ্গা অর্থনীতির এবং তার পরিবর্তে চেয়েছিলেন মাত্র ৫০ টি দিন। আম জনতার ৫০টি দিনের কষ্ট ও ধৈর্য। সেই কষ্ট তো আর যে সে কষ্ট নয় , চোরা রোদে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাঙ্ক বা এটিএম এর বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য , নিজের প্রয়োজনে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করা অর্থ নিজের প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে না পারার কষ্ট, দীর্ঘ কর্মজীবনের পর নিজের শেষ বয়েসে নিজের পেনশনের টাকা তোলার জন্য বারবার ব্যাঙ্ক ও পোস্টঅফিসের দরজায় করা নাড়ার যন্ত্রনা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা তো ছিল আরো সঙ্গীন। নোট বাতিলের এই চক্রব্যূহে তাদের ব্যবসা উঠে যাওয়ার জোগাড়, হয়তো উঠেও গেছে অনেকের। বহু অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষ হারিয়েছেন তাদের অন্ন বস্ত্রের সংস্থান। তবুও আশায় ছিল সমগ্র জাতি যে হয়তো জব্দ হবে কালো টাকার কারবারিরা, সেই তাকে গড়ে উঠবে নতুন ভারত কিন্তু সব শেষে ৫০ দিনের যবনিকার যখন পতন হলো , তখন দেখা গেলো প্রধানমন্ত্রীর দেখানো স্বপ্ন এক শানিত তীরের ফলার মতো দুঃস্বপ্নের ন্যায় বিঁধলো ভারত মাতৃকার বুকে।
না ধরা পড়লেন কোনো বড়ো মাপের কালো টাকার কারবারি, না ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোলো দেশের প্রথম সারির কোনো শিল্পপতি বা রাজনেতা অথবা কোনো আমলার, যাদের বেশির ভাগের অসততা প্রশ্নের উর্দ্ধে। আবার প্রত্যেক বারের মতো বোকা বোনে গেলো খেঁটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। যাঁরা কিনা ভেবেছিলো নতুন ভারতের নির্মাণে থাকবে তাদের ভূমিকা , তারা কি পেলো ? না দেশের গড় জিডিপি ৭.৬৫ % থেকে কমে ৬.১ % এ এসে দাঁড়ালো। আর সব থেকে বড়ো ঝড় টা আছড়ে পড়লো সেদিন যেদিন , রিসার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া জানালো যে বাতিল নোটের ৯৯% ফিরে এসেছে। স্বপ্নভঙ্গ হলো ১২০ কোটির আবার একবার। এটাই হয়তো "আচ্ছে দিন। "