দীর্ঘ অপেক্ষার পর সম্ভবত ভারতে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী বেতন কমিশনের রিপোর্টের প্রথম ভাগ গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে । মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন , আমাদের উপর আস্থা রাখুন , বিশ্বাস রাখুন অবশ্য আপনারা সুযোগ পাবেন । বেতন কমিশন ২০২০ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে । নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণাকে তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনগুলি স্বাগত জানালেও বকেয়া সংক্রান্ত বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনো প্রতিশ্রুতি না দেওয়ায় তা নিয়ে অপেক্ষা শোনা গেল তাদের কন্ঠে ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইনডোরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘বেতন কমিশনের রিপোর্টের প্রথম ভাগটা আজই হাতে পেয়েছি। কমিশন যা সুপারিশ করেছে, সেটাই আমরা মানব।’’ নিজের দলের সরকারি কর্মী সংগঠনের সমাবেশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন যে, কর্মীদের মূল বেতন এখন যে ভাবে ব্যান্ড পে ও গ্রেড পে-তে বিভক্ত, তা তুলে দিয়ে গোটা অঙ্কটাকেই অবিভক্ত মূল বেতন হিসেবে দেখানোর সুপারিশ করেছে বেতন কমিশন। মূল বেতনকে ২.৫৭ দিয়ে গুণ করলে যা হয়, সেই অঙ্ককেই পরিবর্তিত মূল বেতন হিসেবে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
কিন্ত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে বেতন কমিশন কার্যকরী হলে তা আসলে ২০১৬ থেকে এফেক্ট হওয়ার কথা । এই চার বছরের অতিরিক্ত বেতন এরিয়ার হিসাবে দেওয়ার কথা । কিন্ত মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে এ কথা না থাকায় ক্ষোভে ফুঁসছে কর্মচারী সংগঠনগুলি । এমনি কী তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টর গ্রুপের আহ্বায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যের সরকারি কর্মীরা অনেক দিন ধরে বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার তথা নতুন বেতন কাঠামো ঘোষিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ঘোষণাটা করে দিলেন। বেতন বৃদ্ধির কথাটা তিনি জানিয়ে দিলেন। কর্মীরা অবশ্যই খুশি।’’ তবে বকেয়া বেতনটাও মিটিয়ে দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছু না বলায় মনোজ চক্রবর্তীও হতাশ। তাঁর কথায়, ‘‘বর্ধিত বেতন অনুযায়ী যে টাকা গত চার বছরে বকেয়া হয়, তা হয়তো কর্মীরা পাবেন না। কর্মীদের সেই হতাশার বিষয়টাও সরকারের সঙ্গে ভাবা উচিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের কথাও।’’
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে এ দিন তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন সিপিএমের সরকারি কর্মী সংগঠন কোঅর্ডিনেশন কমিটির  সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘এ রকম ঘটনা আমরা অতীতে দেখিনি। সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো কী হবে, বেতন কমিশন সে বিষয়ে কী সুপারিশ করল, সে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী কোথায় দাঁড়িয়ে করছেন? নিজের দলের কর্মী সগঠনের সভায়! এটা চলতে পারে না। এটা গণতান্ত্রিক এবং প্রশাসনিক রীতিনীতির পরিপন্থী। গণতন্ত্রে এ রকম হয় না।’’ বকেয়া টাকা মেটানোর বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও শব্দ খরচ না করায় কর্মীদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে বিজয়শঙ্করের দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মীদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আগামী সোমবার সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সরকারি কর্মীদের বিক্ষোভ হবে।’’
রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছে বিজেপির ছাতার তলায় থাকা রাজ্য সরকারি কর্মচারী পরিষদও। সংগঠনের রাজ্য কমিটির আহ্বায়ক দেবশিস শীল বলেন, ‘‘সরকারি কর্মীরা কি শিশু! তাঁদের হাতে এই ললিপপ ধরানোর মানে কী?’’ দেবাশিসের কথায়, ‘‘বেতন বৃদ্ধির এই ফর্মুলা তো কেন্দ্রীয় সরকার অনেক আগেই প্রয়োগ করেছে। তার সঙ্গে বকেয়াটাও মিটিয়ে দিয়েছে। রাজ্য সরকার বকেয়া মেটানোর ব্যাপারে একটা কথাও বলল না। শুধু বেতন বৃদ্ধির নিয়মটা ঘোষণা করল। এইটুকু কাজ করতে চার বছর সময় চলে গেল? দেবাশিসের হুঁশিয়ারি, ‘‘পুজো মিটলেই আমরা পথে নামছি।’’
আইএনটিইউসি-র সুবীর সাহা বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট সরকার একবার আমাদের ২৭ মাসের বকেয়া টাকা আটকে দিয়েছিল। টাকাটা আর দেয়নি। তখন এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলেছিলেন, যে সরকার কর্মীদের ২৭ মাসের বকেয়া টাকা মেরে দেয়, গদিতে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার সেই সরকারের নেই। আর এখন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই আমাদের ৪ বছরের বকেয়া টাকা মেরে দিচ্ছেন!’’ বকেয়া আদায়ের দাবিতে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়েও পথে নামতে তাঁরা প্রস্তুত বলে সুবীর সাহা এ দিন জানিয়েছেন।


Find out more: