গত ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সম্প্রীতি আকাদেমি আয়োজিত কলেজ স্ট্রিট ‘বই- চিত্র’ সভাগৃহে অনুষ্ঠিত হোল এক ভাব গম্ভীর সাহিত্যানুষ্ঠান। মূলত গ্রন্থ প্রকাশ, আলোচনা, সম্মাননা,কবিতা আবৃত্তি আর গানেই সাজানো ছিল দু-ঘন্টার সু-চিন্তিত অনুষ্ঠান।অনুষ্ঠানের সূচনায় পরিবেশিত হয় শিল্পী মনীষা চক্রবর্তীর সুকন্ঠের রবীন্দ্র সঙ্গীত। এর পরেই সঞ্চালক সাহিত্যিক কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর এদিন নির্ধারিত আলোচ্য বিষয়
‘এই সময়ে দলিত সমাজ ও সাহিত্য’ আলোচনা শুরু করার আগে দুটি বাংলা ও একটি ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি করান। কবি শ্যামল কুমার প্রামাণিকের দ্বিভাষিক কাব্যগ্রন্থ ‘Fiery Garland of Letters ওরফে ‘আগুনের বর্ণমালা’ থেকে হৃদয়গ্রাহী কবিতা তিনটি আবৃত্তি করে শোনান ক্রমে সোমা মুখোপাধ্যায়, কোয়েল চৌধুরী ও বসন্ত পাথ্রডকর। অবহেলিত প্রান্তজ মানুষ, তার সমাজ ও সাহিত্য কেন্দ্রিক তাৎপর্যপূর্ণ উল্লিখিত বিষয়ে আলোচনায় ডুবে যাবার আগে প্রান্তজ সাহিত্যিক শ্যামল কুমার প্রামাণিকের উপরোক্ত দ্বিভাষিক কাব্যগ্রন্থটির সমবেতভাবে আনুষ্ঠানিক উন্মোচন ঘটান মঞ্চাসীন আলোচক শিক্ষাবিদ কুমার রাণা, ড . সুরঞ্জন মিদ্দে, ড . দেবী চ্যাটার্জী ও গ্রন্থ- প্রকাশক (গাঙচিল) অধীর বিশ্বাস।
অনাদি কাল থেকেই সমাজের দলিত শ্রেণীর মানুষ চলমান সমাজ ব্যবস্থার দ্বারা অবহেলিত, বঞ্চিত হয়ে আসছে। ফলত: তাদের দু:খ, দুর্দশার কথা মূল ধারার মানুষের কাছে পৌছে দিতেও পারেনি তাদের সাহিত্য সঙ্স্কৃতির মাধ্যমে। কিন্তুু কেন পারেনি, যতটুকু পেরেছে তার গুণগত মানইবা কতটুকু। এই নানান বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোকপাত করতেই আয়োজিত হয়েছিল প্রাসঙ্গিক আলোচনা সভা ‘এই সময়ে দলিত সমাজ ও সাহিত্য’ নিয়ে। আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচক কুমার রাণা আলবেরুনির উক্তি উল্লেখ করে বলেন-যে বিষয় সম্পর্কে জানেনা, ভারতীয়রা সেই বিষয়ে অনর্গল কথা বলাদের মতোই তিনি একজন। দলিত সাহিত্য সমাজ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক উদ্ভুত এন আর সি’র ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করেন।
অন্যতম আলোচক তথা সম্প্রীতি আকাদেমির কর্ণধার ড . সুরঞ্জন মিদ্দে সাহিত্যিক শ্যামল কুমার প্রামাণিককে আত্মার আত্মীয় সম্বোধন করে বলেন শ্যামলের সাহিত্য শুধুমাত্র প্রান্তিক সাহিত্য নয়, দলিত সমাজের সাতন্ত্রত্রতার আন্দোলন। সভামুখ্য তথা দলিত আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত ড . দেবী চ্যাটার্জী গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন-দলিত কে, কাকে আমরা দলিত বলবো, যারা ভারতবর্ষের ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দ্বারা অবহেলিত? তিনি বলেন দলিত সাহিত্য বলতে আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দলিত সমাজের চাওয়া-পাওয়া, সুখ-দু:খের কথা নিজ নিজ মাতৃভাষায় লিখিত আকারে তুলে ধরাকে বোঝায়। লোকাচার এবং লোককথার মধ্যে থেকেও দলিত সাহিত্যের সূচনা হয়েছে। তিনি খেদোক্তি করে বলেন মূল স্রোতের প্রকাশনার তূলনায় লিটিল ম্যাগাজিন আন্দোলন শুরু হবার পর দলিত সাহিত্য বেশি করে লিটিল ম্যাগাজিনের পাতাতে প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। শ্যামল কুমার রাণার Fiery Garland of Letters ওরফে আগুনের বর্ণমালার প্রকাশক তথা গাঙচিলের কর্ণধার অধির বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে আশা প্রকাশ করে বলেন-সমাজের প্রান্তজ মানুষের আত্মমর্যাদা, আত্মসচেতনতার সাহিত্য আন্দোলনে একদিন রাষ্ট্র কেপে উঠবে। তিনি আরো বলেন গাঙচিল আগামিতেও তার সিমীত সামর্থে আরো রুচিশীল দলিত সাহিত্য প্রকাশের প্রয়াশ চালিয়ে যাবে। এদিন অনুষ্ঠানে কৃতি শিক্ষার্থী সারমিন সুলতানা ও মনোজ টুডুকে বিশেষভাবে সম্মানীত করা হয় আকাদেমির তরফে।


Find out more: