পুলিশকে টাকা দিতেন নিয়মিত । নিচুতলা থেকে একেবারে শীর্ষস্থান পর্যন্ত আধিকারিকদের সারদা কর্তা টাকা দিতেন বলে সিবিআই কাছে নাকি স্বীকার করেছেন । সুদীপ্ত সেনের এই স্বীকারোক্তিকে সম্বল করেই আরও বড় অভিযানে নামছে সিবিআই । জানা গেছে ,সুদীপ্তের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এখন আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন ময়দানে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে চলা সারদা-তদন্তের ইতিও টানতে চাইছেন তাঁরা। ওই সূত্রটির মতে, আগামী নভেম্বর মাসে চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। চার্জশিটে নতুন করে কয়েক জন বিধায়ক এবং সাংসদের নাম ঢুকতে পারে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। নাম থাকতে পারে বেশ কয়েক জন পুলিশ অফিসারেরও। শুধুমাত্র সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের বক্তব্যের উপর দাঁড়িয়ে নয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ের মরিয়া চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ছ’টি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট সহ মোট সাতটি চার্জশিট জমা পড়েছে আদালতে।
সূত্রের খবর, সুদীপ্ত সেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেছেন, এ রাজ্যের বেশ কয়েকটি থানাকে মাসোহারার টাকা পাঠাতে হত। ব্যবসা চালানোর জন্য টাকা দিতে হয়েছে ভিন্রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকদেরও। সারদা গোষ্ঠীর দেড়শো থেকে দু’শোটি ল্যাপটপ এবং পেনড্রাইভ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাতে সারদার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য উল্লেখ ছিল। যদিও সিবিআইয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে, সুদীপ্ত সেন যে ল্যাপটপ এবং পেনড্রাইভের কথা বলছেন, সে সবের উল্লেখ সিজার লিস্টে পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, এত ল্যাপটপ এবং পেনড্রাইভ গেল কোথায়? কেন সেগুলি সিজার লিস্টে দেখানো হয়নি? কী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল তাতে? সুদীপ্ত সেন যে মাসোহারার কথা বলছেন, তার সবিস্তার রেকর্ড কী ছিল ওই ল্যাপটপ, পেনড্রাইভেই?
সুদীপ্ত সেন এবং সংস্থার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেরা করে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। সিবিআইয়ের এক অফিসার জানিয়েছেন, রাজীবকে হেফাজতে নিয়ে যে জেরা করলেই এ সব বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে, তা স্পষ্ট হবে। সে কারণেই রাজীবকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল আদালতে। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘যদি রাজীব দোষী না-ই হবেন, তা হলে এ ভাবে ‘আত্মগোপন’ করে রয়েছেন কেন? সিবিআই ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬০ ধারায় তাকে সাক্ষী হিসেবে তলব করা হয়েছিল। তিনি তো ‘আত্মগোপন’ করে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলার মতো কাণ্ড করছেন।’’
খাতায়-কলমে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি ধরা পড়লেও, আরও কয়েকশো কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। কোন কোন প্রভাবশালী সারদার থেকে সুবিধা ভোগ করেছেন, কেনই বা পুলিশকর্মীরা ওই চিটফান্ড সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন— তা চূড়ান্ত চার্জশিটে স্পষ্ট করে। সৌজন্যে ডিজিটাল আনন্দবাজার ।