বিজেপি নেতা তথা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখন সবই এক করতে চাইছেন । তিনি এক দেশ , এক দল , এক নীতি , এক ভাষার পর এবার এক কার্ডের পক্ষে সওয়াল করলেন। অমিত শাহ গতকাল রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (আরজিআই)-এর নতুন ভবনের শিলান্যাস করার পর বলেন, ‘‘জনগণনার সময়ে কারও আধার, ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান বা ব্যাঙ্ক সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে তা কেবল একটি কার্ডে সংরক্ষিত করা সম্ভব।’’ ওই ব্যবস্থা কার্যকর হলে বহু কার্ড নিয়ে ঘোরার প্রয়োজন পড়বে না।
বিশ্বের বহু উন্নত দেশেই নাগরিকদের পরিচয়ের প্রশ্নে সাধারণত একটিই কার্ড থাকে। সেই কার্ডের নম্বরের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তির সমস্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকে তথ্যভাণ্ডারে। অপরাধমূলক কাজের তদন্তে মাউসের মাত্র একটি ক্লিকেই কোনও সন্দেহভাজন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেখে নিতে পারেন তদন্তকারীরা। আজ কতকটা সেই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আধার, প্যান, ভোটার, ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সব তথ্যের জন্য একাধিক কার্ডের পরিবর্তে একটি কার্ডেই সব তথ্য ধরে রাখার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে ইউপিএ আমলেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। মূলত সে সময়ে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর)-এর মাধ্যমে কোনও ব্যক্তির পরিবার সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যের পাশাপাশি সেই ব্যক্তির বায়োমেট্রিক তথ্য এক জায়গায় আনার পরিকল্পনা নেয় কেন্দ্র। অতীতে ২০১০ ও ২০১৫ সালে এনপিআর-এর জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ফের ওই কাজ হবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের পরিকল্পনা হল, এনপিআর ও আধার তথ্যের পাশাপাশি কোনও ব্যক্তির সামাজিক ও আর্থিক বিষয়ক সমস্ত তথ্যকে এক জায়গায় আনা। সেই ইঙ্গিতই আজ দিয়েছেন অমিত শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘এতে অপরাধমূলক কাজের তদন্তে সাহায্যের পাশাপাশি সরকারি প্রকল্প রূপায়ণেও সুবিধা হবে।’’
অনেকের মতে, এতে ভবিষ্যতে কোনও ব্যক্তির উপরে নজরদারি রাখা আরও সহজ হবে সরকারের। আসন্ন জনগণনা খাতায়-কলমের পরবির্তে মোবাইল অ্যাপের করা হবে বলে জানিয়েছন শাহ। ধার্য হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠেছে এই ধরনের কার্ড কতটা নিরাপদ তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে । এ প্রসঙ্গে ডিজিটাল আনন্দবাজারকে সাইবার বিশেষজ্ঞ কুমার বিক্রম সিংহের বলেছেন, ‘‘গোটাটাই নির্ভর করছে কার্ডের নিরাপত্তার দিকটি কতটা সুরক্ষিত তার উপরে। যদি কার্ডে শক্তিশালী সুরক্ষাবিধি থাকে, তা হলে তথ্য চুরির ভয় কম। কিন্তু আজকের দিনে হ্যাকাররা অত্যন্ত চালাক। বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশ্নে এরা এতটাই দক্ষ হয় যে কোনও একটি সিস্টেমের নিরাপত্তা বিধিকে পাশ কাটিয়ে এক দিকে যেমন তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম, তেমনই কোনও ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট এক নিমেষে খালি করে দিতে পারে এরা। তাই কার্ডের তথ্যকে কী ভাবে সুরক্ষার মোড়কে প্যাকেটবন্দি (এনক্রিপট) করে রাখা হচ্ছে তা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’ একই সঙ্গে ১৩০ কোটি ভারতবাসীর তথ্যকে একটি স্থানে জমা রাখার জন্য দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ কেন্দ্রের এই প্রস্তাবের নেপথ্যে রয়েছে অন্য উদ্দেশ্য । সাধারন নাগরিক কিংবা সরকার বিরোধীদের উপর নজরদারী চালানোর লক্ষ্যেই অমিত শাহের এক কার্ডের প্রস্তাব । এতে সাধারন মানুষকে নজরে খুব সহজ হবে ।