আজ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রীসভার বৈঠক হয় । এই বৈঠকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় । তবে জানা গেছে বেতন কমিশনার ২০১৬ থেকে ইক্রিমেন্ট দিলেও বকেয়া দেওয়ার কথা সরকারি প্রেস নোটে লেখা নেই ।
ক্যাবিনেট বৈঠক শেষ হওয়ার পরে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ দিন নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন। একটি প্রেস নোটও প্রকাশ করা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সরকারি কর্মী সংগঠনের সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সরকারি কর্মীদের মূল বেতনে ব্যান্ড পে-গ্রেড পে ভাগাভাগি আর থাকছে না, অবিভক্ত মূল বেতন কাঠামো চালু হচ্ছে। এ দিনের প্রেস নোটেও সে কথাই জানানো হয়েছে। বেতন কমিশনের সুপারিশ মতো বর্তমান মূল বেতনকে ২.৫৭ দিয়ে গুণ করে নতুন মূল বেতন ধার্য করা হচ্ছে। সেই অঙ্ক কিন্তু বর্তমানের মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) যোগফলের চেয়ে বেশি। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে যে, এত দিন যে ১২৫ শতাংশ ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীরা পাচ্ছিলেন, তা মূল বেতনে মিশে গেল।
রাজ্য সরকার এ দিন জানিয়েছে যে, নতুন বেতন কাঠামোকে কার্যকর হিসেবে ধরা হবে ২০১৬-র ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু বর্ধিত বেতন কর্মীরা হাতে পাবেন ২০২০-র ১ জানুয়ারি থেকে। অর্থাৎ ২০১৬-র ১ জানুয়ারি থেকে যদি একজন কর্মী এই নতুন হারে বেতন পান, তা হলে যে হারে তাঁর বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি হত এবং তার জেরে তাঁর বেতন ২০২০ সালের ১ জানুয়ারিতে যা দাঁড়াত, সেই বেতনই কর্মীরা পাবেন। কিন্তু নতুন কাঠামো অনুযায়ী গত চার বছরে যে অতিরিক্ত টাকা কর্মীদের প্রাপ্য হয়, সেই বকেয়া টাকা আর দেওয়া হবে না। সরকারের তরফ থেকে প্রকাশ করা প্রেস নোটে লেখা হয়েছে— ২০১৬-র ১ জানুয়ারি থেকে নতুন বেতন কাঠামোর ‘নোশনাল এফেক্ট’ ধরা হবে। এই ‘নোশনাল এফেক্ট’-এর অর্থ হল— খাতায়-কলমে নতুন বেতন কাঠামো ২০১৬-র শুরু থেকেই কার্যকর। কিন্তু বাস্তবে ২০১৬-র ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে ৪৮ মাস কেটে যাচ্ছে, সেই ৪৮ মাসের জন্য প্রাপ্য অতিরিক্ত অর্থ কর্মীরা হাতে পাবেন না। বকেয়া অর্থের বিষয়ে একটি শব্দও খরচ করা হয়নি সরকারি প্রেস নোটে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কর্মী মহলে। বিরোধী শিবিরে থাকা কর্মী সংগঠনগুলি তোপ দাগতে শুরু করেছে। কর্মী সংগঠনগুলি তোপ দাগছে ডিএ এবং এইচআরএ (হাউজ রেন্ট অ্যালাওয়েন্স) নিয়েও। বিজেপির সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশিস শীলের কথায়, ‘‘প্রথমত, সরকার স্পষ্ট করে দিল যে, বর্ধিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী যে টাকা কর্মীদের প্রাপ্য হয় গত চার বছরের বকেয়া হিসেবে, তার পুরোটাই গায়েব। সরকার একটা টাকাও দেবে না। দ্বিতীয়ত, স্যাট রায় দিয়েছিল যে, আগে আমাদের বকেয়া ডিএ মেটাতে হবে, তার পরে বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে হবে। কিন্তু স্যাটের রায়ও রাজ্য সরকার মানল না। আদালতের নির্দেশকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে কোনও সরকার, এমনটা আমরা কখনও দেখিনি।’’
আগে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ টাকা এইচআরএ হিসেবে পেতেন কর্মীরা। বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। কমিশন বলেছিল, এইচআরএ-র সর্বোচ্চ সীমা ১০ হাজার ৫০০ টাকা হওয়া উচিত। ক্যাবিনেট সেই ঊর্ধ্বসীমাটাকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠন ফেডারেশনের তরফে মনোজ চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘কর্মীরা ২০১৬ সাল থেকেই যদি বর্ধিত বেতন হাতে পেতেন তা হলে ভাল হত। তবে সরকারকে অনুরোধ করব, পেনশনভোগীরা যাতে এই বেতন বৃদ্ধির সুফল পূর্ণমাত্রায় পান, সেটা নিশ্চিত করতে।’’
আইএনটিইউসি-র তরফে সুবীর সাহা বলেন, ‘‘ডিএ-র বিষয়ে কোনও ঘোষণা নেই। এইচআরএ আগে পেতাম ১৫ শতাংশ, করে দেওয়া হল ১২ শতাংশ। এই রকম কোথাও কোনও দিন ঘটেছে! সব কর্মী সংগঠন একসঙ্গে আন্দোলনে না নামলে কোনও উপায় নেই। তা না হলে এই বঞ্চনা চলতেই থাকবে।’’
গ্র্যাচুয়িটি এবং মেডিক্যাল অ্যালাওয়েন্সের ক্ষেত্রে অবশ্য কমিশনের সুপারিশের চেয়ে বেশি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কমিশনের সুপারিশ ছিল, গ্র্যাচুয়িটির ঊর্ধ্বসীমা ৬ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করা হোক। ক্যাবিনেট সোমবার সেটা ১২ লক্ষ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন সুপারিশ করেছিল, মেডিক্যাল অ্যালাওয়েন্স মাসে ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হোক। ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই খাতে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। ( কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ডিজিটাল আনন্দবাজার)


Find out more: