এনআরসি আতংকে রাজ্যের সাধারন মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক তখনই নিরবে কালোবাজারিরা আর্থিক মুনাফা করতে ব্যস্ত । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমলে সেভাবে জিনিস পত্রের দাম আকাশ ছোয়া হয়নি ঠিকই তবে মাঝে-মধ্যে দাম বেড়ে যায় । এবার তাই হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত আছেন বিভিন্ন কাজে সেই সুযোগে পেঁয়াজের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়েছে । গত মাস থেকেই দাম বাড়ছিল পেঁয়াজের এই মাসে তা সব কিছুকে অতিক্রম করে গেল । বাড়তে বাড়তে এখন ৭০ টাকায় পৌছেছে পেঁয়াজ । তবে কলকাতা কোনো কোনো বাজারে আবার ৮০ টাকা কিলো হিসোবে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ।
কিন্ত পেঁয়াজের দাম কী আদৌ এতটা বৃদ্ধি হতে পারে ? নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে রাজ্য সরকারের গাফলতি । নিয়ম করে নজরদারী না চালানোর দায়েই দাম বৃদ্ধি ?কোলে মার্কেট এবং পোস্তা বাজারে আড়তদারা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, পেঁয়াজের দাম যে বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। নাসিক এবং দক্ষিণ ভারত থেকে যে পেঁয়াজ আসত, তাতে ভাটা চলছে। কিন্তু তা বলে ৬০ বা ৭০ টাকা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। বুধবারও ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায় কেজি প্রতি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে বলে জানান কোলে মার্কেটের আড়তদার বিশাল চন্দ্র।
তিনি বলেন, “রাজ্যে প্রতি দিন গড়ে ৬০টি করে ট্রাক ঢুকত। এক একটি ট্রাকে ১৬ টন, কোনওটায় ১৮ টন পেঁয়াজ আসত। কিন্তু সেই জায়গায় রাজ্যে ৪০টি ট্রাক ঢুকছে। কলকাতায় ২০টির বেশি আসছে না। ফলে জোগানে তো ঘাটতি হবেই। তবে ঘাটতি থাকলেও, আড়তদাররা কম বেশি ৪৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘খুচরো বাজারে এত দাম হওয়া উচিত নয়।”
পোস্তা বাজারে গদি রয়েছে ব্যবসায়ী গুরুপদ সিংহের। একই সুর শোনা গেল তাঁর মুখেও। তিনি বিশালের সঙ্গে এক মত। তাঁর দাবি, ‘‘কমিশনের ভিত্তিতে পেঁয়াজের কারবার চলে। আমাদের বেশি টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। কিন্তু পেঁয়াজের দাম খুচরো বাজারে এত হবে কেন?’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে অবশ্য অন্য কথা বললেন ,“মহারাষ্ট্রে বৃষ্টি হওয়ার কারণ দেখিয়ে নাসিকের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এর নেপথ্যে আরও একটি কারণ রয়েছে বলে আমার মত।” তিনি বলেন, “অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সামনে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোট। এই সময় নাসিকের ব্যবসায়ীদের কেউ চটাতে চান না। অনেক ব্যবসায়ীই ভোটের আগে কালোবাজারি করে থাকেন। হঠাৎ দাম বাড়িয়ে দেন। এ বারও তেমন হয়েছে কি না, সেটা দেখা উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের।”
মহারাষ্ট্র ছাড়াও, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ থেকে এ রাজ্যে পেঁয়াজ আমদানি হয়। তা ছাড়া এ রাজ্যের বর্ধমান, হুগলি তো বটেই, এখন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। রাজ্যের এগ্রিকালচার টাস্ক ফোর্সের সদস্যও কমলবাবু। তাঁর দাবি, “বাজারে নজরদারির চালানোর জন্য এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের ভূমিকা থাকাও জরুরি। সেটা ঠিক ভাবে হচ্ছে কি?’’ তাঁর কথায়: ‘‘প্রতি বছর রাজ্যে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজের প্রয়োজন পড়ে। বাংলাতেও এখন ভাল ফলন হচ্ছে। কিন্তু সঠিক সংরক্ষণের কোনও পরিকল্পনা না থাকায় সেই ভিন্ রাজ্যের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয় আমাদের।” অনেক আড়তদার আবার হু হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য রাজ্যের ভূমিকাকেও কাঠগড়ায় তুলছেন।
পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানে সাধারন মানুষ বিস্মিত । এনফোর্সমেন্টের মত সরকারি সংস্থা থাকা সত্ত্বে এভাবে দাম বৃদ্ধি হচ্ছে কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা । মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মমতা সরকার একটি কমিটিও গঠন করেছে তারা কি করছে ? অনেকেই মনে করছে , সরকারের ঠিকঠাক নজরদারী থাকলে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি হত না ।