মেট্রোর কারশেড তৈরি জন্য কাটা হয়েছে হাজার তিনেক গাছ । গাছ কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ-বন্ধুরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন । শু্ক্রবার রাত থেকে ২৯ জন সমাজকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন সেখানে। তাঁদের বিচার বিভাগীয় হেপাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে মোট ৩৮ জনের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও শনিবার সকালে আন্দোলনকারীরা এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের রাস্তা আটকায় পুলিশ।
প্রায় ৫ লক্ষ সবুজ গাছপালায় ঢাকা ১২৮০ হেক্টর আয়তনের আরে মায়ানগরীর ফুসফুস হিসাবে পরিচিত। ওই এলাকাতেই মেট্রোর রেলের কারশেড ডিপো গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীসের সরকার। তার জন্য ২ হাজার ৬৪৬টি গাছ কাটার অনুমতি দেয় বৃহন্মুম্বই পুরসভার বৃক্ষ বিভাগ। তা নিয়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সরকারের মধ্যে গত দু’বছর ধরে টানাপড়েন চলছে।
মামলা গিয়ে পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতীয় পরিবেশ আদালতেও (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল)। তার মধ্যেই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরিবেশকর্মী এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে বম্বে হাইকোর্টে চারটি আবেদনও জমা পড়ে। তাতে গাছ কাটা বন্ধের আর্জি জানানোর পাশাপাশি, আরে কলোনির ওই এলাকাকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণার দাবি জানায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বনশক্তি’।
কিন্তু শুক্রবার তাঁদের আর্জি খারিজ করে দেয় বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রদীপ নন্দরাজোগ এবং বিচারপতি ভারতী দাঙরের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানায়, ‘‘পরিবেশপ্রেমীরা মনে করেন, প্রকৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে তাঁদের যে সম্পর্ক, একমাত্র তা-ই চিরন্তন সত্য। বাকি সমস্ত সম্পর্ক অস্থায়ী। এ ক্ষেত্রেও উন্নয়নের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন বটে, কিন্তু এই লড়াই দিশাহীন।’’ আরে কলোনিকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণা করতে গেলে, যে আইনি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত, আন্দোলনকারীরা সে ব্যাপারেও
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ‘‘গ্রেটার মুম্বইয়ের পুরসভা (এমসিজিএম)-এর নিয়ম অনুযায়ী আদালতের নির্দেশ তাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট হওয়ার ১৫ দিন পরেই গাছ কাটা যায়। আরে কলোনির ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। এ দিন সন্ধ্যায় ওয়েবসাইটে আদালতের নির্দেশ পোস্ট হওয়ার পর, রাতেই বুলডোজার নামিয়ে গাছ কাটা শুরু করে পুরসভা। সপ্তাহান্তে কোর্ট বন্ধ থাকবে। এর পর দশেরা উপলক্ষেও বন্ধ থাকবে আদালত। আদালত যত দিনে খুলবে, তত দিনে গোটা এলাকা ফাঁকা হয়ে যাবে। চ্যালেঞ্জ জানানোর উপায়ই থাকবে না।’’
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীদেরই পক্ষ নিয়েছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্য ঠাকরে। এই অদূরদর্শিতার পর জলবায়ু কেন্দ্রীয় জলবায়ু দফতরের অস্তিত্ব থাকা চলে না এবং প্লাস্টিক ও দূষণ নিয়ে তাদের কথা বলা চলে না বলে নিজের টুইটার হ্যান্ডলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানান আদিত্য ঠাকরে।
আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে এ দিন সকালেই আরে কলোনিতে ছুটে যান শিবসেনা নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী। কিন্তু সেখানে ঢোকার মুখেই পুলিশ তাঁকে আটকায় এবং ফিরে আসতে বাধ্য করে বলে টুইটারে অভিযোগ করেন তিনি। অমিতাভ বচ্চন, বরুণ ধবন-সহ মুম্বইয়ের বহু তারকাও আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।


Find out more: