বুধবার বিকেলে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের আবাসনে অভিজিৎবাবুর মা নির্মলাদেবীর সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁকে সংবর্ধনা নিশ্চয় দেব। তবে এ বার কলকাতায় এসে মায়ের সঙ্গে দেখা করাটাই ওঁর প্রথম কাজ। ওই সময়টা পরিবারকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমিও ২১ অক্টোবর থেকে থাকছি না।’’ ২৩শে কলকাতায় আসছেন অভিজিৎবাবু।
তাঁর এ বারের কলকাতা সফর নিজের পরিবারের জন্য। নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় পরের বার কলকাতায় এলে তাঁকে সংবর্ধনা দেবে রাজ্য সরকার।
সোমবার দুপুরেই নোবেলজয়ীর কলকাতার ফ্ল্যাটে মিষ্টি ও ফুল পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফোনে নির্মলাদেবীকে শুভেচ্ছা জানানোর সময়েই মমতা জানিয়েছিলেন, তিনি বুধবার তাঁর কাছে যাচ্ছেন। এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে নিয়ে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ওই আবাসনে যান মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিল নির্মলাদেবীর জন্য শাড়ি ও অভিজিৎবাবুর জন্য উপহার, মিষ্টি।
আটতলার ‘৮৬-এফ’ ফ্ল্যাটে নির্মলাদেবী এবং তাঁর কয়েক জন পড়শির সঙ্গে বসে গান-গল্পের মধ্যেই সাবুর বড়া খান মুখ্যমন্ত্রী। সাবুর বড়া বানিয়েছিলেন নির্মলাদেবীর ২৪ ঘণ্টার গৃহকর্মী রমা হালদার। তবে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অভিজিৎবাবুর ভাই অনিরুদ্ধের দেখা হয়নি। জরুরি কাজ থাকায় বিকেলেই তিনি মুম্বই চলে গিয়েছেন। ইন্দ্রনীল দু’টি রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং মুখ্যমন্ত্রীর লেখা একটি গান শোনান সকলকে। বিভিন্ন সভায় যাওয়ার পথে বা অন্য সময়ে মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে গান লেখেন এবং ছবি আঁকেন, তা নিয়েও গল্প হয় অনেক।
গ্রামীণ এলাকায় কী ভাবে কাজ হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তা জানতে চান নির্মলাদেবী। মমতা জানান, যাঁরা সরকারি প্রকল্পের আওতায় আছেন, তাঁরা তো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেনই। বাইরের লোকেরাও সেই সুবিধা পান। কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েত, কৃষি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের কাজ নিয়েও আলোচনা হয়। পরে নির্মলাদেবী বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলছিলাম, রাজ্যে উন্নয়নের কাজ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি না কেন? মাঝেমধ্যে কন্যাশ্রীর কথা শুনি। কিন্তু তাতে কেমন সাফল্য এল, তা জানতে পারি না। সংবাদমাধ্যম তা জানায় না।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অভিজিৎবাবু দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। লিভার ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক অভিজিতের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ ছিল। ওঁরা দু’জনে বীরভূমে গিয়ে কোয়াক চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কী ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু ঠিক করে দেওয়া যায়, সেই কাজ করছেন। এটা আমাদের গর্বের বিষয়।’’ মমতা জানান, দক্ষতা ও যোগ্যতার জন্যই অভিজিৎবাবুকে প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপে রাখা হয়েছিল। রাজ্যের উন্নতির স্বার্থে অভিজিৎবাবুকে কাজে লাগানো হবে। কৃষিতে আগ্রহী নির্মলাদেবী এবং তাঁর দলকেও কাজে লাগাতে চান মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি যতটা সম্ভব বলেছি। আর আলাপনকে বলেছি, তিনি যেন কৃষিসচিবকে সঙ্গে নিয়ে এসে ওই দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে মাসিমার সঙ্গে কথা বলেন।’’
অভিজিৎবাবুদের বাড়িতে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলা প্রতিভাবান লোকজনের জায়গা। যদি আপনারা খুঁজে দেখেন, তা হলে দেখবেন, প্রায় সব প্রতিভাবানের সঙ্গে বাংলার মাটির যোগ রয়েছে।’’