অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যাঙ্ক এমপ্লইজ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ডাকে দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘট পালিত হয়েছে মঙ্গলবার।। দেশের সমস্ত রাষ্টায়ত্ব ব্যাঙ্কগুলি এই ধর্মঘটে সামিল হয়েছে। রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাঙ্কগুলি ধর্মঘটে যোগ দেওয়ায় লেনদেন নিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন লক্ষ লক্ষ দেশবাসী। ব্যাঙ্ক সংগঠনগুলি ধর্মঘট আহ্বান করায় লেনদেন নিয়ে চরম যে আশঙ্কা করা হয়েছিল মঙ্গলবার গ্রাহকরা তা টের পান সকাল থেকেই। তবে আশার কথা হল, ধর্মঘটে সামিল হয় নি বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি। রাষ্টয়ত্ব ব্যাঙ্ক পরিষেবা বন্ধ থাকায় অনেকেই প্রয়োজন মিটিয়েছেন বেসরকারি ব্যাঙ্কের পরিষেবা নিয়ে।
ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ, সপ্তাহে কাজের দিন কম করা, অনাদায়ী ঋণ আদায় করা, শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ-সহ একাধিক দাবিতে ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্মীরা। বহুবার কেন্দ্রের কাছে দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনায় বসলেও কোন দাবিই সরকার মেটায়নি বলে অভিযোগ ধর্মঘটি সংগঠনগুলির। পরবর্তীতে কেন্দ্রের ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরন সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এরফলে নতুন করে কাজের সুযোগ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কাও করা হচ্ছে ধর্মঘটীদের পক্ষ থেকে।
এদিকে ধর্মঘটের ব্যাপারে গ্রাহকদের সতর্ক করে দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। তবে ব্যাঙ্কের তরফে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ব্যাঙ্কের কিছু কর্মী ধর্মঘটে সামিল হওয়ায় লেনদেন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা কম।অন্যদিকে, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র ব্যাঙ্কও গ্রাহকদের সতর্ক করেছে। সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, লেনদেন স্বাভাবিক রাখার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে ধর্মঘটের ফলে ব্যাঙ্কের স্বাভাবিক কাজকর্মে প্রভাব পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরনের ঘোষণার পরই সরব হয় ব্যাঙ্ক কর্মচারি ইউনিয়নগুলি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২ দিনের ধর্মঘটের ডাক দেয় ৪টি ব্যাঙ্ক কর্মী ইউনিয়ন। তবে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত সেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তার পর এবার ফের ধর্মঘটের ডাক।
ধর্মঘটি সংগঠনগুলির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্ক পরিচালনার ক্ষেত্রে যে নীতি গ্রহন করেছে তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব দাশগুপ্ত দাবি জানান, কেন্ত্রীয় সরকার অবিলম্বে ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুক। সরকার সিদ্ধান্ত না বদলালে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
রাজ্যজুড়ে চলছে ব্যাঙ্ক ধর্মঘট। মঙ্গলবার একদিনের ধমঘটে রাষ্ট্রায়াত্ব ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক পরিষেবা পুরোপুরি বিপর্যস্ত। সকাল থেকে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটে নাজেহাল সাধারন মানুষ।
ব্যাংকে ধর্মঘটে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। স্টেট ব্যাংকের কিছু শাখা বাদ দিলে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং বেসরকারি ব্যাংক এই ধর্মঘটে সামিল হয়েছে। জানালেন ব্যাংক এমপ্লয়ীজ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব দাশগুপ্ত।
ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ফলে সাধারন মানুষ অসুবিধায় পড়েছেন এটা সঠিক কথা। ধর্মঘট হলে অসুবিধা তো হবেই। আবার আমাদের ব্যাংক এমপ্লয়িজ রাও তাদের একদিনের বেতন কাটিয়েই এই ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কর্পোরেটদের সুবিধার জন্য নীতি গ্রহণ করছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের ধর্মঘট। প্রতিবাদ আমাদের করতেই হবে। নইলে বাঁচবে না ব্যাংক সেক্টর।
ব্যাঙ্ক ধর্মঘট এর ফলে সাধারণ মানুষ নাজেহাল হন সকাল থেকেই। প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে এসে ধর্মঘটের ফলে ফিরে যেতে হয়। চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় গ্রাহকদের। পার্ক স্ট্রিটের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখায় প্রয়োজনীয় 10000 টাকা তুলতে এসেছিলেন তন্ময় ভট্টাচার্য। কিন্তু ব্যাংকের গেটে সেখানকার কর্মচারীরা ধর্মঘটে সামিল হওয়ায় টাকা তুলতে পারেননি তিনি। তন্ময়বাবু বলেন দশ হাজার টাকা তার আজকেই প্রয়োজন। দেওয়ালির আগে দোকানে মাল তোলার জন্য ব্যবসার কারণে এই টাকাটা তুলতে এসেছিলেন। কিন্তু খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে। শুধু তন্ময়বাবু নন তার মতো অনেকেই এদিন ব্যাংকের দরজা থেকে ফিরে গিয়েছেন। তবে গ্রাহকদের অনেকেই আবার ব্যাংক ধর্মঘটের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। যেমন শিয়ালদহের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখায় এদিন প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ সরকার। তিনি বলেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যেভাবে ব্যাংকগুলোকে সংযুক্তিকরণ করতে চাইছে তাতে করে বেকারত্ব বাড়বে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। একদিন না হয় কষ্ট হল।