কারও হাতে ঝুলছে ইলিশ। কারও হাতে আবার ইনডাকশন আভেনের প্যাকেট! এ ভাবেই এক এক করে শিবির থেকে বেরিয়ে আসছেন রক্তদাতারা। নামী কোম্পানির ইনডাকশনের চেয়ে বড়সড় মাপের ইলিশ ‘উপহার’ পেয়েছেন যাঁরা, তাঁদের হাসিটা আরও চওড়া!
শুক্রবার সকাল থেকে উত্তর কোলকাতার কলেজ স্কোয়ারের কাছে ‘মির্জাপুর বান্ধব সম্মিলনী’র উদ্যোগে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। ক্লাবের তরফে গত কয়েক দিন ধরে রক্তদান শিবিরের কথা প্রচার করা হয়েছিল। হাল্কা ভিড় ছিল সকাল থেকে। পরে রক্তদাতাদের মুখে মুখে চাউর হয়ে যায়, ওখানে রক্ত দিলেই ভাল ‘উপহার’ মিলছে। রক্ত দিলেই পাওয়া যাচ্ছে এক কেজির ইলিশ অথবা ইনডাকশন আভেন, যাঁর যেটা পছন্দ! ব্যস, এর পর রক্তদাতাদের ভিড় বাড়তেই থাকে। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় স্বাস্থ্য দফতর। মাঝ পথেই রক্তদান শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও তত ক্ষণে ৬০ জন রক্তের বিনিময়ে ইলিশ এবং ইনডাকশন আভেন নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।
রক্তের বিনিময়ে উপহার দেওয়ার বিষয়টিকে ‘গর্বের কাজ’ বলেই মনে করছেন ‘মির্জাপুর বান্ধব সম্মিলনী’র সম্পাদক সঞ্জয় নন্দী। এলাকায় তিনি তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত। তাঁর কথায়, “বুকের পাটা আছে, তাই প্রকাশ্যে উপহার দিয়েছি। আগে যত বার এমন শিবিরের আয়োজন করেছি, রক্তদাতাদের উপহার দিয়েছি। পরের বছরও দেব।” এখানেই থামছেন না তিনি। বলছেন, ‘‘অনেক বড় বড় নেতার রক্তদান শিবিরেও উপহার দেওয়া হয়। গত চার বছর ধরে রক্তদান শিবির করছি। প্রথম বছর পাখা, তার পর রেনকোট, মোবাইল, মিক্সচার মেশিন সব দিয়েছি। এ বার এক কেজি ইলিশ আর ইনডাকশন দিলাম। পরের বছর এর থেকেও ভাল কিছু দেব।”
কিন্তু এ ভাবে উপহার দিয়ে রক্ত সংগ্রহ করা যায়? সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি তো রীতিমতো শিবিরগুলিতে এ নিয়ে প্রচারও করে: ‘প্রলোভন নয়, স্বেচ্ছায় হোক রক্তদান’। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরেই বিধিনিষেধ বা রক্তদানের আদর্শবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে নানা জায়গায় চলছে এই ‘ঘুষ’এর বিনিময়ে রক্ত নেওয়া। অর্থাত্ মির্জাপুর বান্ধব সম্মিলনী প্রথম ক্লাব নয়, যারা উপহারের বিমিনয়ে রক্ত সংগ্রহ করল। গোটা রাজ্য জুড়েই এমন ‘রীতি’ চলছে। আটকানোর কি কোনও ব্যবস্থাই নেই? ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ বলেন, “৪৫ বছর ধরে বিভিন্ন রক্তদান শিবিরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। এ ভাবে উপহার দেওয়া ঠিক নয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের পদক্ষেপ করা উচিত। যাঁরা রক্ত দেন, তাঁদের একটি ফর্ম ফিল আপ করতে হয়। তাতে চিকিৎসকের সই থাকে। এখানে তো শুনলাম সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক ওই রক্ত সংগ্রহ করেছে। উপহার দেওয়া হচ্ছে দেখেও কেন ওই চিকিৎসকেরা ব্যবস্থা নিলেন না? তাঁদেরও সমান শাস্তি হওয়া উচিত।”