মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে বোনফোঁটা দিয়েছিলেন বৈশাখীকে , শুক্রবার থেকে শোভনের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেয় রাজ্য সরকার । এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি শোভন –বৈশাখী তৃণমূলে ফিরে যাচ্ছেন ? প্রশ্নের মধ্যে আবার একটা ধাক্কা । গতকাল শুক্রবার বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়েরেএকমাত্র মেয়ে রিলিনার জন্মদিন ছিল । সেই উপলক্ষে পার্টি আয়োজিত হয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গোলপার্কের আবাসনের কমিউনিটি হলে। তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই দলের নেতৃত্বই নিমন্ত্রিত ছিলেন পার্টিতে। তৃণমূলের কেউ গেলেন না। বিজেপিরও প্রথম সারির কাউকে সেখানে দেখা গেল না। কিন্তু কেউ ফোন করে, কেউ উপহার পাঠিয়ে সৌজন্যটুকু বহাল রাখার চেষ্টা করলেন। পরের সারিতে থাকা কয়েকজন নেতা পৌঁছেও গেলেন।
ভাইফোঁটার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে গিয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বেহালা পূর্বের বিধায়ক তথা অধুনা বিজেপি নেতা শোভনকে সে দিন ফোঁটা দেন মমতা। ফোঁটা দেন বৈশাখীকেও। উপহার দেওয়া-নেওয়া হয়। ফুরফুরে মেজাজে ঘণ্টা দুয়েক গল্প-গুজবও চলে বলে খবর। তার ফাঁকেই মেয়ের জন্মদিনের পার্টিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিমন্ত্রণ করেছিলেন বৈশাখী। তবে ১ নভেম্বর ওই পার্টিতে যেতে পারবেন না বলে তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। অন্য কোনও সময়ে যাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন, দাবি শোভন ঘনিষ্ঠদের।
কিন্তু নিমন্ত্রণ শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল না। শোভনের বাড়িতে আয়োজিত পার্টিতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও নিমন্ত্রিত ছিলেন।
তৃণমূলের এই অনুপস্থিতিকেই কিন্তু কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিমন্ত্রিত হয়েও যাননি ঠিকই, তবে ওই পার্টি এড়াতে চাইছেন, এমন কথাও বলেননি। চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে যাবেন বলে ওই পার্টিতে যেতে পারবেন না বলে দিলীপ জানিয়ে দিয়েছিলেন। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যে রাহুল সিংহের জন্মদিনে শোভন-বৈশাখী হাজির হয়েছিলেন, সেই রাহুলকেও শুক্রবার সন্ধ্যায় শোভনের বাড়িতে দেখা যায়নি। কিন্তু রাহুল ফোনে শুভেচ্ছা জানান। রীতেশ তিওয়ারিকে পার্টিতে পাঠান। উপহারও পাঠান।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননও সৌজন্য দেখিয়েছেন বলে শোভনের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত সূত্রে জানা গিয়েছে। পায়ে প্লাস্টার থাকায় মেনন এখন কিছু দিন খুব একটা চলাফেরা করতে পারছেন না। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে সেই অক্ষমতার কথা মেনন আগেই জানিয়েছিলেন, শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় শোভনের বাড়িতে নিজের প্রতিনিধি পাঠান মেনন, তাঁর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেন জন্মদিনের উপহারও। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি চন্দ্র বসুও সস্ত্রীক নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন।
কিন্ত বাড়িতে গিয়ে নিমন্ত্রণ করা সত্ত্বে কেউ এলেন না বৈশাখীর মেয়ের জন্মদিনে । তৃণমূল নেতৃত্বের এড়িয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কী বৈশাখীকে পাত্তা না দেওয়ার ইঙ্গিত । রাজনৈতিক মহল মনে করছে , মমতার কাছে শোভন যতটা গুরুত্বপূর্ণ ততটা গুরুত্বপূর্ণ নন বৈশাখী । সেটা এই ঘটনা থেকে সংকেত দিল তৃণমূল নেতৃত্ব । কারণ বৈশাখীর মেয়ে তো আর শোভনের মেয়ে নয় ।
তবে এ প্রসঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “কাউকে নিমন্ত্রণ করাটা আমার সৌজন্যের মধ্যে পড়ে। রক্ষা করাটা তাঁদের সৌজন্যের বিষয়।”


Find out more: