বিদেশ থেকে যে গরু আসে তা হাম্বা ডাকে না তাই ওটা গরুর আ্যন্টি , এর পুজো করলে দেশের কল্যাণ হবে না , আসল গরুর দুধে রয়েছে সোনা আজব দাবি দিলীপের
রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের একাংশ গোমাংস খেতে পচ্ছন্দ করেন । তাঁদের লক্ষ করে এবার আক্রমণ শানালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন , যারা গোমাংস থেকে পচ্ছন্দ করেন তাদের উচিত কুকুরে মাংস খাওয়া । একই সঙ্গে দিলীপবাবু এও বলেন ‘‘গরু আমাদের মা, গোহত্যাকারীদের সমাজবিরোধী হিসেবেই দেখি’’।
বিজেপি সাংসদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘অনেক শিক্ষিত লোক রয়েছেন, যাঁরা রাস্তার ধারে গো মাংস খান। কেন শুধু গরু খান? তাঁরা তো কুকুরের মাংসও খেতে পারেন। অন্যান্য পশুর মাংসও খেতে পারেন। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কিন্তু নিজের বাড়িতে বসে খান। গরু আমাদের মা, গোহত্যাকারীদের সমাজবিরোধী হিসেবেই দেখি’’।
তবে দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনও কারণ নেই বলে রাজ্যের বুদ্ধিজীবীরা মন্তব্য করেছেন ।
বিজেপি নেতারা গরুকে নিয়ে নানা জিনিস আবিস্কার করে থাকেন । কেউ বলেন , গরু নাকি অক্সিজেন সাপ্লাই দেন । আবার কেউ বলেন গোমূত্রে ক্যানসার ভাল হয় । সাধ্বী প্রজ্ঞা তো স্তন ক্যানসার গোমূত্র খেয়ে ভাল হয়েছে । এবার নবতম সংযোজন গরুর দুধে রয়েছে সোনা বলে দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বর্ধমান শহরের টাউন হলে ‘ঘোষ এবং গাভীকল্যাণ সমিতি’র সভায় সোমবার তিনি দাবি করেন, ‘‘গরুর দুধে সোনার ভাগ থাকে। তাই দুধের রং হলুদ হয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘দেশি গরুর কুঁজের মধ্যে স্বর্ণনাড়ি থাকে। সূর্যের আলো পড়লে, সেখান থেকে সোনা তৈরি হয়।’’
‘তত্ত্ব’ শুনে বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের চক্ষুচড়কগাছ। তাঁদের স্বীকারোক্তি, এমন ‘বৈজ্ঞানিক’ গবেষণা পৃথিবীর কোথাও হয়েছে বলে তাঁদের জানা নেই।
এর আগে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি মন্ত্রী রেখা আর্য দাবি করেছিলেন, ‘‘গরুই একমাত্র পশু, যে শ্বাস গ্রহণের সময় শুধু অক্সিজেন গ্রহণ করে না, প্রশ্বাসের সঙ্গে তা পরিবেশে ফিরিয়েও দেয়।’’ বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞাও দাবি করেছিলেন, তিনি স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। গোমূত্র পান করে আর পঞ্চগব্য গ্রহণ করে নিজেকে সারিয়ে তুলেছেন।
তা বলে গোদুগ্ধে ‘সোনা’? বছর তিনেক আগে গুজরাতের জুনাগড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিশেষজ্ঞ গিরের চারশো গরুকে নিয়ে সমীক্ষার পরে দাবি করেন, গোমূত্রে সোনা আছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এবং বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান বিএ গোলাকিয়া এ দিন দাবি করেন, ‘‘ছ’টি প্রজাতির গরুর একশোরও বেশি মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করে সোনার উপস্থিতি পেয়েছি। এই সোনা রয়েছে ক্লোরাইড যৌগ হিসেবে।’’
বর্ধমান জেলার তৃণমূল সভাপতি রাজ্যের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গরুর দুধে সোনার তত্ত্ব শুনে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।’’ দিলীপবাবু অবশ্য গরু নিয়ে আরও মত জানাতে ছাড়েননি। তাঁর কথায়, ‘‘বিদেশ থেকে যে গরু আনা হয়, তা ‘হাম্বা’ আওয়াজ করে না। যে ‘হাম্বা’ ডাকে না, সে গরুই নয়। গোমাতা নয়, ওটা আন্টি। আন্টির পুজো করে দেশের কল্যাণ হবে না।’’