আজ কার্যত ‘সিপাহি বিদ্রোহ’-এর সাক্ষী থাকল রাজধানী। যে পুলিশের কাজ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া, আজ তাঁরাই নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে পথে নামলেন। আইনজীবীদের কাছে পরপর দু’দিন মার খাওয়ার প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন। সকালে দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে শ’খানেক পুলিশ কর্মীর নীরব বিক্ষোভ দিয়ে যা শুরু হয়েছিল, দিন গড়াতে তা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।উত্তেজিত ভিড়ের প্রবল চিৎকার। ‘‘হাউ ইজ দ্য জোশ? লো স্যার।’’ বড় কর্তারা আবেদন করছেন, কাজে ফিরে যান। বিক্ষোভকারীদের জবাব, ‘‘প্রশ্নই নেই। অনেক সয়েছি। এ বার বিহিত চাই।’’দিনভর ঘেরাওয়ের শেষে সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেটে মোমবাতি মিছিল করেন পুলিশ কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে সাড়ে সাতটা নাগাদ ধর্না ওঠে।

 

কিন্তু আজকের বিক্ষোভ এক দিকে যেমন বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তেমনই প্রশ্ন উঠেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকা নিয়েও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে থাকা দিল্লি পুলিশের ওই বিদ্রোহ আদতে কেন্দ্রের প্রতি পুলিশ বাহিনীর অনাস্থা বলে আক্রমণ শানিয়েছে আপ ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। এরই মধ্যে কর্নাটক ও কেরলের আইপিএস সংগঠন, হরিয়ানা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন-সহ একাধিক রাজ্য থেকে সমর্থন আসায় কেন্দ্রের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। ‘হ্যাশট্যাগ তিসহাজারি’ লিখে পশ্চিমবঙ্গের আইপিএস-রাও তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন। পাশে দাঁড়াতে পথে নেমেছিলেন দিল্লি পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীরাও।

 

মূল ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। সে দিন দুপুরে তিসহাজারি আদালত চত্বরে গাড়ি পার্ক করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা বাধে আইনজীবীদের। যা গড়ায় হাতাহাতিতে। চলে গুলি। অভিযোগ, ওই ঘটনায় একতরফা শাস্তি দেওয়া হয় পুলিশকর্মীদের। ছাড় পেয়ে যান আইনজীবীরা। গত কাল সাকেত আদালতের সামনে ফের এক কনস্টেবলকে মারধর করেন আইনজীবীরা। ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

শীর্ষ পুলিশ কর্তারা সব জেনেও নীরব থাকায় আজ সকাল ১০টা থেকে পুলিশের সদর দফতরের সামনে সাদা পোশাকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন নিচুতলার কর্মীরা। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আইটিও-তে পৌঁছতে থাকেন দলে দলে পুলিশ। বেলা ১২টা-সাড়ে ১২টার মধ্যে আইটিও জনসমুদ্রের আকার নেয়। ধর্নায় দাঁড়ানো কনস্টেবল মুকেশ কুমার ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘‘আইনজীবীদের কোনও দোষ নেই! সব দোষ পুলিশের! নেতৃত্ব দুর্বল হলে এমন হবেই।’’ দিল্লির প্রাক্তন সিপি নীরজ কুমারও বর্তমান সিপি অমূল্য পট্টনায়কের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘বাহিনীর কোনও নেতা নেই। একতা নেই।’’

 

 

 

 

 


Find out more: