সংবিধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিধানসভায় যা হয়েছে, তা তিনি ভাল চোখে দেখছেন না বলে বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যপাল এমনকি বিধানসভা থেকে বেরনোর সময়ে মঙ্গলবারই স্পিকারকে বলেছিলেন ‘বাড়াবাড়ি’ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর আচরণে তিনি ‘হতভম্ব’— এমন কথাও এ দিন টুইটারে লিখেছেন ধনখড়।
বুধবার সকাল ৬টা ২৪ থেকে ৮টা ২৮-এর মধ্যে টুইটগুলি করেছেন রাজ্যপাল। প্রথম টুইটিতে বিস্ময় প্রকাশ করে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘‘সরকার পক্ষের যাঁরা নিমন্ত্রিত ছিলেন, তাঁরা কেউ (রাজভবনে) এলেন না দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি।’’ তার পরের টুইটগুলিতে তিনি লিখেছেন যে, সংবিধান দিবসে বিধানসভায় নিজের ভাষণে তিনি কী বলেছেন এবং কী বার্তা দিতে চেয়েছেন। সকাল ৮টা ১১ মিনিটের টুইটটি সবচেয়ে আক্রমণাত্মক। সেখানে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকেই নিশানা করেছেন রাজ্যপাল। লিখেছেন, ‘‘কারও প্রতি সৌজন্য দেখানোর প্রশ্নে আমি কখনও আপোস করব না।’’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ব্যক্তিগত ভাবে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল বলেও লিখেছেন ধনখড়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দিক থেকে যা আচরণ প্রত্যাশিত ছিল, তা মেলেনি বলে রাজ্যপাল অভিযোগ করেছেন ওই টুইটে। ‘‘আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম,’’— লিখেছেন রাজ্যপাল।
মঙ্গলবার বিধানসভায় নিজের ভাষণে রাজ্যপালকে খোঁচা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় ঢোকা বা বেরনোর পথে রাজ্যপাল কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। নমস্কার-প্রতি নমস্কার বিনিময় বা চোখাচোখিও হয়নি তাঁদের মধ্যে। তা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী পরে নিজের ভাষণে কটাক্ষ করেন। রাজ্যপাল যে তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি, সরাসরি সে কথাটা উচ্চারণ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে এমন ব্যবহার তাঁর সঙ্গে কেউ করেন না বলে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন। দেখা হলে প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেন— এমনও বলতে শোনা যায় মমতাকে।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের জবাব দেওয়ার চেষ্টাই এ দিন রাজ্যপাল করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে যে ব্যবহার প্রত্যাশিত ছিল, তিনি তা পাননি— টুইটে এ দিন তেমনই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন রাজ্যপাল। তাতেই থামেননি। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানদের সঙ্গে তাঁর যে সৌজন্য বিনিময় হয়েছে, সে কথাও রাজ্যপাল উল্লেখ করেছেন।
মঙ্গলবারও একই অভিযোগ তুলেছিলেন। রাতে যে টুইটগুলি তিনি করেছিলেন, তার একটিতে লিখেছিলেন, ‘‘আমার অদ্ভুত লেগেছে যে, বিধানসভার নেতা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমার থেকে দূরে থাকলেন এবং আমাকে দেখার পরে বা যখন আমি অম্বেডকরের মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গেলাম, তখন এগিয়ে এলেন না।’’
এই টুইট রাজ্যপাল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের পরে। মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁকে কটাক্ষ করেছেন, সে কথা কানে যাওয়ার পরেই মঙ্গলবার রাতে তিনি ওই টুইট করেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। তবে সংঘাতে ইতি টানার কোনও গরজ যে তাঁর তরফে অন্তত নেই, বুধবার ফের টুইট করে সে ইঙ্গিত রাজ্যপাল দিয়ে দিয়েছেন বলে তৃণমূলের একাংশ মনে করছে।
বুধবার তৃণমূলও কিন্তু প্রত্যাঘাত করেছে। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। নির্বাচিত সরকারকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল— অভিযোগ তৃণমূলের। এর পরেও কি রাজ্যপাল পদটা জরুরি? প্রশ্ন তুলেছেন পার্থ।