মাত্র ৬ মাসের ব্যবধান। আর তাতেই পাল্টে গেল রাজ্য রাজনীতির ছবি। যে দু’টি বিধানসভা অর্থাৎ কালিয়াগঞ্জ এবং খড়গপুর সদর আসন থেকে গত লোকসভায় লিড পেয়েছিল বিজেপি, সেই দু’টি আসন তো হারাতে হলোই সঙ্গে করিমপুরেও হারতে হলো। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে খড়গপুর সদরে ২৪ শতাংশ ভোট কমেছে বিজেপির। প্রায় ৯ শতাংশ ভোট কমেছে কালিয়াগঞ্জে। অবশ্য ২ শতাংশ ভোট বেড়েছে করিমপুরে। অন্যদিকে, লোকসভা ভোটের পর তৃণমূলের কাছে ফিরে আসার লড়াই সফল। তিনটি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তিনটিতেই জয় পেয়েছে শাসক দলের প্রার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য রাজনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আবশ্যিক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেগুলি কী কী একবার দেখে নেওয়া যাক -

 

৬) তৃণমূলের তৃণমূল স্তর আরও মজবুত হবে : এই জয়ের পর দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের জনসংযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। যার ফলে একদিকে যেমন দলের ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে, তেমনি আসন্ন পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে সংগঠন আরও মজবুত হবে।

 

৫) শুভেন্দু এবং মহুয়ার গুরুত্ব : করিমপুরে জয়ের কাণ্ডারি যদি মহুয়া মৈত্র হন, তাহলে কালিয়াগঞ্জ আর খড়গপুর সদরে শুভেন্দু অধিকারী। নি:সন্দেহে শুভেন্দুর কাছে ‘টাফ ফাইট’ ছিল। আর সেই ফাইট শুধু জয়ই নয়, তৃণমূলের কাছে প্রথমবারের জন্য এই দু’টি আসন এনে দিয়েছেন। অন্যদিকে, রাজনীতিতে তুলনায় নতুন মহুয়ার স্ট্র্যাটিজিতেই যে ২০১৬ করিমপুর বিধানসভা তারপর ২০১৯ লোকসভা এবং পরিশেষে উপনির্বাচনে জয়ের মহুয়ার প্ল্যানিং সফল। তাই এই উপনির্বাচনের ফলাফলের উপর শুভেন্দু অধিকারী এবং মহুয়া মৈত্রর গুরুত্ব দলে আরও বাড়বে বলে রাজনৈতিক মহলের মত।

 

৪) প্রশান্ত কিশোরের প্রাধান্য : ৬ মাসের মধ্যে তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনই ছিল প্রশান্ত কিশোরের প্রথম পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষায় তিনি যে ফার্স্ট ডিভিশনে উত্তীর্ণ হয়েছেন একথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কাটমানির টাকা ফেরৎ দেওয়ার মতো সাহসী পদক্ষেপ, সেই সঙ্গে ‘দিদি’কে বলো’র মতে জনসংযোগকারী স্ট্র্যাটেজিতে তিনি যে সফল তা তৃণমূল বুঝে গেছে। আর তাঁর স্ট্র্যাটেজিতেই আরামকেদারা ছেড়ে তৃণমূলের ছোট-বড়-মাঝারি নেতাদের মাঠে নেমে কাজ করার ফল হাতেনাতে পেল তৃণমূল। তাই ভবিষ্যতে প্রশান্ত কিশোর দল পরিচালনায় শেষ কথা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

 

৩) বিজেপির স্ট্র্যাটেজি : তিন কেন্দ্র উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয় দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়ের কাছে যে ধাক্কা তা মানতে বাধ্য বঙ্গ বিজেপি। প্রার্থী বাছাই কতটা ঠিক ছিল এবং রাজ্য জুড়ে প্রার্থী বাছাইয়ের স্ট্র্যাটেজিতে পরিবর্তন কতটা জরুরি সেটাই এবার বঙ্গ বিজেপি’র কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। প্রার্থী বাছাইয়ে কোন কোন দিক আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে সেটাও আলোচ্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ NRC কী এবং কীভাবে তা রাজ্যের মানুষদের কাছে পৌঁছতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা হবেই বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

 

২) বিজেপির জনসংযোগ : তৃণমূলের ‘দিদি’কে বলো’ সহ অন্যান্য জনসংযোগকারী কর্মসূচীকে পাল্টা দেওয়ার মতো জনসংযোগকারী স্ট্র্যাটেজি কী হওয়া দরকার তা নিয়ে বিজেপি হোম ওয়ার্ক করবেই বলে ধরে নেওয়া যায়। সোশ্যাল মিডিয়াকে আরও কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়েও পরিকল্পনা থাকবে বলে রাজনৈতিক মহলের মত।

 

১) বাম-কংগ্রেস জোটের ভবিষ্যৎ : লোকসভা নির্বাচনের পর নিজেদের অস্তিত্ব বোঝাতে কংগ্রেস এবং বাম দু’দলই জোট ঘোষণা করেছিল প্রকাশ্যেই। কিন্তু জোটের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে তা নিয়ে প্রশ্ন এবার উঠতে শুরু করেছে। কারণ, উপনির্বাচনে জোট প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটল। যদিও সোমেন মিত্র এবং সুজন চক্রবর্তী ভবিষ্যতে জোটের ফলাফলের উপর আশাবাদী। এবং এই ফলের পর বাম-কংগ্রেস যে হয় এস্পার, নয় ওস্পারের মতো সব চেষ্টা করবে তা বলাই বাহুল্য।

 

Find out more: