এনআরসি র প্রভাবের সাথে সাথে আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছে বিজেপির স্থানীয় নেতা ও কর্মীদের একটি বড় অংশের আত্মতুষ্টি ও এলাকার দলীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর জনসংযোগের অভাব, বেশ কিছু এলাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা, বাড়ি বাড়ি প্রচারে খামতি—কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের কারণ হিসেবে দলের অন্দরে তৈরি হওয়া রিপোর্টে এই তথ্যই উঠে এসেছে। লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকে প্রায় ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বৃহস্পতিবার রাতে রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন জেলা ও কালিয়াগঞ্জের নেতৃত্ব। প্রতিটি বৈঠকে নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে একাধিক রিপোর্ট তৈরি করা হয়। সেই রিপোর্টেই পরাজয়ের কারণ হিসেবে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি নির্মল দামের দাবি, এনআরসির প্রভাব, দলের নেতা- কর্মীদের একাংশের আত্মতুষ্টি, জনসংযোগের অভাব, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও বাড়ি বাড়ি প্রচারের কাজ না হওয়ায় বিজেপি জিততে পারেনি। তিনি বলেন, ‘‘সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্য করব না। কী কারণে পরাজয় হয়েছে, সেই রিপোর্ট দলের জেলা কমিটির তরফে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।’’
এ দিকে, পরাজয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন নেতা ও কর্মীরা। শুক্রবার রায়গঞ্জে দলের জেলা কার্যালয়ে হাতেগোনা কয়েক জন নেতা ও কর্মী এসেছিলেন। কালিয়াগঞ্জের বিজেপির সমস্ত কার্যালয় এদিন সুনসান ছিল।
বিজেপির একাধিক জেলা নেতার দাবি, রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল বিজেপির থেকে বেশি ভোট পেয়েছে। সেই সব পঞ্চায়েতে বিজেপির স্থানীয় নেতা ও কর্মীরা বাসিন্দাদের মধ্যে এনআরসির আতঙ্ক দূর করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেই সঙ্গে, স্থানীয় নেতা ও কর্মীদের আত্মতুষ্টির পাশাপাশি, সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীও গত দেড় বছরে বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ তৈরি করেননি। উপনির্বাচনের প্রচারের শুরু ও শেষের দু’একদিন ছাড়া তিনি কালিয়াগঞ্জে ঘাঁটি গেড়ে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার চালাননি। ২৭০টি বুথের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩০টি বুথে দলের কমিটি গড়ে ওঠেনি। ফলে সেই সব এলাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা ও বেশির ভাগ পঞ্চায়েতে বাড়ি বাড়ি নির্বাচনী প্রচার হয়নি। এ সব কারণেই পরাজয় হয়।
দেবশ্রীর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে তাঁকে গোটা দেশে কাজ করতে হয়। সারাবছর ব্যস্ততার মধ্যেও আমি যতটা সম্ভব আমার নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ বজায় রাখি। উপনির্বাচনে কালিয়াগঞ্জে যতটা সম্ভব প্রচার চালিয়েছি। আমার ভূমিকা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা ছড়ানো হচ্ছে।’’