ছেলে দোষী হলে তাকে পুড়িয়ে মারা উচিত বলে মন্তব্য করলেন হায়দরাবাদ গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় এক অভিযুক্তের মা। অন্য দিকে, আজই ওই ঘটনা নিয়ে প্রথম মুখ খুলেছেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। তিনি জানিয়েছেন, ফাস্ট ট্র্যাক আদালতেই ওই মামলার বিচার হবে।

হায়দরাবাদের ঘটনায় নিহত তরুণীর মা আগেই হত্যাকারীদের পুড়িয়ে মারা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন। আজ সংবাদমাধ্যমের একাংশে একটি ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে। তাতে এক অভিযুক্তের মাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমার ছেলে দোষী হলে তাকেও পুড়িয়ে মারা উচিত। নিহত তরুণীও তো কারও মেয়ে। এখন আমি কষ্ট পাচ্ছি। বুঝতে পারছি,  ওই তরুণীর মা কতটা কষ্ট পাচ্ছেন।’’ তবে তিনি কোন অভিযুক্তের মা তা স্পষ্ট নয়।

অন্য এক অভিযুক্ত চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলুর মা-ও বলেছেন, ‘‘ওকে উপযুক্ত শাস্তি দিন। আমারও মেয়ে আছে।’’ আর এক অভিযুক্ত জল্লু শিবার মা বলেছেন, ‘‘যা করা প্রয়োজন বলে মনে হয়, তা-ই করুন। ঈশ্বর জানেন কী হবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ওই চার অভিযুক্তের মধ্যে দু’জন পেশায় ট্রাকচালক। বাকি দু’জন খালাসি। তবে চেন্নাকেশভুলুর মা জানিয়েছেন,  তাঁর ছেলে অসুস্থ। তাই ছ’মাস ধরে সে বিশেষ কাজকর্ম করছে না। তার আর এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘ও গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে আমরা মুখ দেখাতে পারছি না।’’

ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভের জেরে গত কাল পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল আন্দোলনকারীদের। এ দিনও ক্ষোভ কমেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের। শামশাবাদের যে কলোনিতে নিহত তরুণী থাকতেন, সেখানকার মূল ফটকে এ দিন তালা দিয়ে দেন বাসিন্দারা। রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে না-দেওয়ার সমর্থনে প্ল্যাকার্ডও দেখা যায়। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক জে রঙ্গা রেড্ডি ও তাঁর সমর্থকেরা কলোনিতে ঢুকতে না-পেরে মূল ফটকের বাইরে ধর্নায় বসে পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন। পরে অবশ্য তরুণীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস সাংসদ এ রেবন্ত রেড্ডি। কলোনির বাসিন্দা এক মহিলার প্রশ্ন, ‘‘এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও টুইট করলেন না কেন?’’ এই পরিস্থিতিতে আজ মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত বিচার হবে।’’ ঘটনার পরে তাঁকে এক থানা থেকে অন্য থানায় ঘোরানো হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তরুণীর বোন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি বলেন, ‘‘পুলিশ কর্তব্যে অবহেলা করেছে। প্রতি থানা যাতে অভিযোগ নেয় তা নিশ্চিত করা হবে। এফআইআর করারও আগে ওই তরুণীর পরিবারকে সাহায্য করা উচিত ছিল।’’

এফআইআর নিতে দেরি করায় তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এখন জেল হেফাজতে রয়েছে চার অভিযুক্ত। তবে তাদের পুলিশ হেফাজতে চেয়ে আদালতে আর্জি জানাতে চায় পুলিশ। এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে জেলেই তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জেরা করা যেতে পারে। এরই মধ্যে‌ সংবাদমাধ্যমের একাংশে প্রকাশিত হয়েছে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার আরও বিবরণ। পুলিশের ‘রিমান্ড রিপোর্ট’কে উদ্ধৃত করে তারা জানিয়েছে, ধর্ষণের আগে তরুণীর মুখ বন্ধ করে তাঁর গলায় হুইস্কি ঢেলে দিয়েছিল অভিযুক্তেরা। ঘটনার আগে তারাও হুইস্কি খেয়েছিল।

অভিযুক্তদের পক্ষে তাদের কোনও সদস্য সওয়াল করবেন না বলে জানিয়েছে রঙ্গা রেড্ডি জেলার বার অ্যাসোসিয়েশন। তবে আদালত জেলার  ‘লিগ্যাল এড সার্ভিস’-এর মাধ্যমে কোনও আইনজীবীকে অভিযুক্তদের পক্ষে সওয়াল করার নির্দেশ দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই নির্দেশ তারা অমান্য করতে পারবে না বলে জানিয়েছে স্থানীয় বার অ্যাসোসিয়েশন।

 

 

Find out more: