শিশু নির্যাতন এবং শিশু পর্নগ্রাফি একটা সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে দীর্ঘদিন। কিন্তু প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব তা এখনও আলোচ্য। সম্প্রতি ৩৭৭টি পর্নগ্রাফি সাইট এবং ৫০টি এফআইআর করা হয়েছে বলে সংসদে জানিয়েছেন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তবে সমস্যা আজকের নয়, শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে এ ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেলেও, প্রতিরোধের প্রেক্ষাপট কিন্তু তেমন ভাবে পাওয়া যায় না৷

 

শিশু ছোটোবেলা থেকে অজগরকে চিনলেও মানুষের ছদ্মবেশে যে সব অজগর তাদের লাঞ্ছনার কারণ হচ্ছে তাদের কিন্তু চিনতে পারছে না৷ যৌনতা নিয়ে আগ্রহ চিরকালীন কিন্তু বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা এবং বয়সোপযোগী শিক্ষাপ্রদান এবং আলোচনা হয় না আদৌ৷ গুড টাচ, ব্যাড টাচ অর্থাৎ শিশুদের ছোটোবেলা থেকেই ভালো স্পর্শ, এবং মন্দ স্পর্শের পার্থক্য বুঝিয়ে বলতে হবে কিন্তু এখানে থেমে থাকলে হবে না৷ ছোটোবেলা থেকে বয়সোপযোগী আলোচনার মাধ্যমে সেফ টাচ, আনসেফ টাচ এবং কনফিউসিং টাচ অর্থাৎ নিরাপদ স্পর্শ, অনিরাপদ স্পর্শ এবং বিভ্রান্তিমূলক স্পর্শ সম্পর্কে সহজ গল্প কথা এবং দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে হবে৷ এ বিষয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় কী বলছেন দেখে নেওয়া যাক-

 

এই ধরনের ঘটনা কেন বাড়ছে ?

১. প্রথমত এটা আগেও হতো। শুধু পদ্ধতিটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে যাঁরা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজের টোপ বা ভালো জায়গায় বিয়ের টোপ দিয়ে স্যাক্সুয়াল ব়্যাকেটে ইনভলভ করত।

২. মোবাইলের দাম অত্যন্ত কমে যাওয়ায় তা সহজেই হাতে চলে আসছে মানুষের কাছে। মোবাইল এবং ইন্টারনেট এসে যাওয়ায় বিভিন্ন ম্যারেজ সাইট বা সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে অটোমেটিক টার্গেট পিপিলসদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই ট্রাফ্রিকিং, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি আরও বাড়ছে।

৩. এগুলো সাধারণত এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন গ্রুপের মাধ্যমে হচ্ছে। যে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম প্রধানত ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এগুলোর মাধ্যমে বেশি করা হয়ে থাকে

 

প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব ?

১. প্রথম দরকার সচেতনতা। বাবা-মাকে আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। ১৮ বছরের আগে সন্তানদের হাতে মোবাইল না দেওয়াই ভালো। যদি দেন নিজেদের মোবাইল দিন সন্তানদের হাতে। তবে তা নির্দিষ্ট একটা সময়ে।

২. গুড টাচ, ব্যাড টাচ কী সেটা বোঝাতে হবে অভিভাবকদের। সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনা গল্পের ছলে ছেলে-মেয়েদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। 

৩. স্থানীয় প্রশাসনকে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করা প্রয়োজন। আইন কী? অপরাধী হলে কী হতে পারে তা জানাতে হবে

৪. ধরা পড়লে দ্রুত বিচার আর কনভিকশন ভীষণ ভীষণ প্রয়োজন

৫. সন্তানদের হাঁটা-চলা এমনকী আচরণে কোনও পরিবর্তন এলে তা ভালো ভাবে লক্ষ্য করা। সেটা নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলা

৬. কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ভারতে যে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া আসছে, তারা যাতে দেশের প্রশাসনকে সহযোগিতা করে সেই দিকটা দেখতে হবে। অর্থাৎ কেউ যদি নিখোঁজ হয়ে যায়, তার হোয়াটস্যাপ দেখে লোকেশনে পৌঁছনে সম্ভব। তাই সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রশাসন যাতে একযোগে কাজ করতে পারে সেই দিকটা খুব প্রয়োজন

৭. গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন এবং সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমগুলির অন্তত প্রত্যেক দেশে এক বা একাধিক নোডাল অফিসার রাখা দরকার, যাঁরা চাইল্ড পর্নগ্রাফি বা এই জাতীয় কোনও জিনিস দেখলে তা বন্ধ করা বা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে 

৮. যে কোনও সোশ্যাল মিডিয়ার সার্চ ইঞ্জিন এবং অ্যানালিটিকটা এতটাই শক্ত হওয়া উচিত চাইল্ড পর্নগ্রাফির কোনও ডেটা আপলোড হলে তা সঙ্গে সঙ্গে  ফিলটার করে ব্লক করা যায় এবং ব্লক করা হয়

৯. এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন মিডিয়াগুলোকে যদি দেশের নির্দিষ্ট আইনের মধ্যে আনা যায় তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে

ছবি -প্রতীকী ছবি

Find out more: