নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদের মাঝেই এবার গোলাগুলি চলল আসামে। পুলিশের গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং দুজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
গুয়াহাটির লালুঙ গাঁও-তে এ দিন বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ। উত্তেজিত জনতাকে থামাতে গিয়ে গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। তাতেই পাঁচ জন জখম হন। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয় ওই তিন জনের।
বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিক সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে অসম। গতকালই আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করে সেখানে। যার পর দফায় দফায় রাজ্যবাসীকে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের নেতা-মন্ত্রীরা। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নিজেও টুইট করেন।
কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ থামানো যায়নি। বরং কার্ফু ভেঙে সকাল হতেই রাস্তায় নামেন সাধারণ মানুষ। জ্বলন্ত কাঠ ফেলে জায়গায় জায়গায় রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে চলতে থাকে সরকার বিরোধী স্লোগান। ছাবুয়ায় বিজেপি বিধায়ক বিনোদ হাজারিকার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। তবে তাতে কেউ হতাহত হননি বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। ওই এলাকায় একটি সার্কল অফিসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
আন্দোলনকারীরা ডিব্রুগড়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের একটি দফতরেও হামলা চালান বলে অভিযোগ স্থানীয় বিজেপি নেতাদের। দফতরের বাইরে বেশ কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি তাঁদের।
এ দিন আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)। সাধারণ মানুষকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আর্জি জানিয়েছে তারা। আসুর তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। বেলা ১১টায় গুয়াহাটির লতাশীল ময়দানে জমায়েত রয়েছে। তার জন্য সকলকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আর্জি জানাচ্ছি আমরা।’’ এমন পরিস্থিতিতে গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দীপক কুমারকে সরানো হয়েছে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে মুন্নাপ্রসাদ গুপ্তকে।
বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার ধারণ করায় গত কাল থেকেই অবরুদ্ধ অসম। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে সেখানে। প্রভাব পড়েছে সড়ক, রেল এবং বিমান পরিবহণেও। এ দিন এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা, গো এয়ার-সহ বেশ কিছু সংস্থা অসম বিমান বন্দর থেকে তাদের একাধিক বিমানের উড়ান বাতিল করেছে। বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু বিমানের অবতরণ। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার উত্তর-পূর্ব শাখার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জীব জিন্দল বলেন, ‘‘ডিব্রুগড়ে ন’টি বিমানের উড়ান বাতিল করা হয়েছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কোনও ট্যাক্সিও পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে গতকাল যাঁরা বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন, তাঁরা এখনও যেতে পারেননি।’’
এ ছাড়াও এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে কলকাতা থেকে ডিব্রুগড়গামী একটি বিমান বাতিল করা হয়েছে। গুয়াহাটি এবং ডিব্রুগড় থেকে দু’টি বিমানের উড়ান বাতিল করেছে ভিস্তারা। ইন্ডিগো, স্পাইসজেট এবং গো এয়ারের তরফেও একাধিক বিমান বাতিল করা হয়েছে। আবার উড়ানের সময়সূচিও বদলেছে একাধিক বিমানের। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত গুয়াহাটি, ডিব্রুগড় এবং যোরহাটগামী এবং সেখান থেকে যত বিমান বাতিল হবে, সেই বাবদ ভাড়ার টাকা যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হবে বলে স্পাইসজেট এবং গো এয়ারের তরফে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে।
গতকাল বিক্ষোভ চলাকালীন ডিব্রুগড়ের ছাবুয়ার একটি রেল স্টেশন চত্বরে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তিনসুকিয়ার পানিতোলা স্টেশন চত্বরেও আগুন ধরানো হয়, যার পর এ দিন অসমে সমস্ত লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। আপাতত ডিব্রুগড় থেকে সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেনও বন্ধ রাখা হয়েছে। এ দিন গুয়াহাটিতে রণজি ট্রফিতে সার্ভিসেস বনাম অসমের ম্যাচ ছিল। কার্ফুর জেরে তা-ও সাসপেন্ড করা হয়েছে।