সিএএ এবং এনআরসি প্রত্যাহারের দাবীতে পথে নামলেন মমতা ব্যানার্জি। মিছিলের প্রথম দিনেই তিনি ঘোষণা করেন ‘‘যতক্ষণ না এগুলি বাতিল হচ্ছে, ততক্ষণ রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাব। কেউ না থাকলে মনে রাখবেন আমরা থাকব আন্দোলনে।’’

এ দিন দুপুরে রেড রোডে বি আর অম্বেডকরের মূর্তি থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত বিশাল মিছিল করেন মমতা। তার পরে সেখানে জমায়েতে কেন্দ্রের উদ্দেশে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘কী করবে, আমার সরকার ফেলে দেবে? আমাকেও ফেলে দাও। এখানে এনআরসি বা সিএবি চালু করতে হলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে।’’ তিনিই যে প্রথম নোটবন্দি এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, তা জানিয়ে মমতার বক্তব্য, ‘‘আস্তে আস্তে আরও সকলে বলবে।’’

মিছিলের গোড়ায় যেখানে মমতা ছিলেন, তার চারপাশে ছিল কঠোর নিরাপত্তাবলয়। সেখানে দেখা যায়নি কোনও নেতা-মন্ত্রীকে। বরং তাঁর পাশে ছিলেন বাংলার কয়েক জন ক্রীড়াবিদ। মিছিলে জনসমাগম সম্পর্কে মমতার মন্তব্য, ‘‘লক্ষ লক্ষ মানুষের মিছিল হয়েছে। শেষ মাথা এখনও দেখা যাচ্ছে না।’’

সিএএ-বিরোধিতায় গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যজুড়ে যে অগ্মিগর্ভ-বিশৃঙ্খলা চলছে, তার নেপথ্যে বিজেপি রয়েছে বলে এ দিন সরাসরি অভিযোগ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টই বলেন, ‘‘কেউ কেউ নিজের আখের গোছাতে টাকার বিনিময়ে বিজেপির কাছে মাথা নত করে আগুন জ্বালাচ্ছে। কারা করছে তার প্রমাণ আমার কাছে আছে।’’ সেই ‘মদত’দাতাদের বিজেপির দালাল বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, ‘বিজেপি হিন্দু-মুসলিমের গোলমাল বাধাতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই গোলমাল করছে। বিজেপি যত না খারাপ, বিজেপির দালালরা তার থেকেও খারাপ। এই দালালদের আমি ক্ষমা করি না।’’

এমনকী, এ দিনের মিছিলের শুরুতেও মমতা বিজেপিকে দুষে অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘বিজেপি বাইরে থেকে লোক ঢুকিয়ে গোলমাল পাকানোর চক্রান্ত করছে। সকলে সতর্ক থাকবেন। কেউ অন্যায় করলে কঠোর ভাবে মোকাবিলা করা হবে।’’ যার জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘বিজেপির মদত থাকলে ওঁর পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে কেন? বিজেপির বিরুদ্ধে এফআইআর করছে না কেন? উনি কি বিজেপিকে দয়া করছেন?’’

নিজে পথে নেমে কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলন করলেও কোনও ভাবে হিংসা যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা জানিয়ে মমতার আবেদন, ‘‘উগ্র আন্দোলনে যাবেন না। কেউ ট্রেনে আগুন জ্বালাবেন না। পোস্ট অফিসে আগুন দেবেন না। এতে মানুষের অসুবিধা হয়।’’ শীতের মরসুমে একের পর এক ট্রেন বন্ধ থাকায় মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে, তারও সমালোচনা করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘দু’টো ট্রেনে আগুন লেগেছে বলে সব ট্রেন বন্ধ করে দেবে?’’

তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র আমার কাছে জানতে চাইছে, সিআইএসএফ, সিআরপিএফ, বিএসএফ চাই? আমি বলেছি, আমার পুলিশই যথেষ্ট। কাউকে চাই না। মানুষই পুলিশের সঙ্গে সামলাতে পারবে। গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন হবে।’’ বিজেপিকে তাঁর পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘‘নিজের বেলায় সাতখুন মাফ! আর যত কিছু বাংলার উপর হামলা! দিল্লি আগে সামলা, পরে দেখিস বাংলা। বাংলা আমরা সামলে নেব।’’

মানুষের কাছে তাঁর আশ্বাস, ‘‘আমরা সকলে এ দেশের নাগরিক। কারও দয়ায় এখানে আমরা থাকি না। স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। না খেয়ে থাকব, কিন্তু কোনও ভাবেই আত্মসমর্পণ করব না।’’

 

Find out more: