মনমহন সিংএর সরকার যখন দুর্নীতি আর নীতি পঙ্গুত্বের অভিযোগে জর্জরিত, তখনই নরেন্দ্র মোদী এক বার বললেন, ‘‘বড় খবর। হিমাচলে এসে মৌন ভেঙেছেন মৌনমোহন সিংহ। আজকাল তো জানাই যায় না, দেশের প্রধানমন্ত্রী কোন বিষয়ে কী ভাবছেন।’’

মনমোহন সিংহকে ‘মৌনমোহন’ বলে কটাক্ষ করতেন যিনি, সেই মোদীই আজ নীরবতার গুণগানে ব্যস্ত। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন আজ। সকালে বাজপেয়ীকে স্মরণ করে একটি ভিডিয়ো টুইট করেন মোদী। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘বাজপেয়ীর জীবন থেকেই শিখেছি, তাঁর বক্তৃতায় যত শক্তি ছিল, সম্ভবত তার থেকে অনেক বেশি শক্তি ছিল তাঁর নীরবতায়। কখন বলতে হয় আর কখন মৌনী থাকতে হয়, তা উপলব্ধি করার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তাঁর।’’

মোদীর এই টুইট নিয়েই আজ সরগরম রাজনৈতিক শিবির থেকে নাগরিক সমাজ। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী ‘নীরবতা’ শিখেছেন ঠিকই। কিন্তু বাজপেয়ী এক সময় তাঁকে ‘রাজধর্ম’ পালনের কথা মনে করিয়েছিলেন, সেটা শেখেননি। তাই সারা দেশ যখন তাঁর প্রতিক্রিয়া চায়, তিনি নীরব থাকেন। বা সঙ্কট গভীরতর হতে দিয়ে তার পরে মুখ খোলেন। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা তুলে আনছেন, উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গোরক্ষকদের হাতে মহম্মদ আখলাকের নিহত হওয়ার ঘটনা। বিরোধীরা এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নোটবন্দির পরে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ৫০ দিনের মধ্যে দুর্ভোগ না-কাটলে জনতা তাঁকে চৌরাস্তায় যে-শাস্তি দেবে, মাথা পেতে নেবেন। ৫০ দিনে কিন্তু ভোগান্তি মেটেনি। টাকা জমা দেওয়া বা টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থতায়  ১০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হল। কিন্তু সময়মতো প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। হাল আমলেও বিজেপির নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ কিংবা ফারুক আবদুল্লাদের আটকে রাখা— প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে কোনও কথা শোনা যায়নি।

 

কংগ্রেসের নেতা অজয় মাকেন বলছেন, ‘‘মোদী যখন বেগতিক দেখেন, তখন চুপ থাকেন। এক সময় মনমোহনকে ‘মৌনমোহন’ বলতেন, এখন সকলে তাঁকে ‘নীরব মোদী’ বলে চেনেন।’’ এমনকি, মোদী সাংবাদিক বৈঠক করেন না কেন, সেই প্রশ্ন তুলে  বেশ কয়েক মাস আগে মনমোহন বলেছিলেন, ‘‘আমাকে বলা হত মৌনী প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমি কখনও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে ভয় পাইনি।’’

মোদীর ‘চুপ’ থাকার একটি ‘ব্যাখ্যা’ অবশ্য গতকাল দিয়েছেন অমিত শাহ। তাঁর যুক্তি, আড়ালে থেকে সরকার নিরন্তর কাজ করে। সব সময় সে সব সামনে আনা জরুরি নয়। যদিও বিরোধীদের দাবি, সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের সুফল যদি মানুষ দেখতে পেতেন, তা হলে প্রশ্ন উঠত না। প্রধানমন্ত্রীর কৌশলী ‘নীরবতা’ অনেক সময়েই বিভাজনে পরোক্ষ প্রশ্রয় দিয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

মোদী আজ বাজপেয়ীর আরও একটি গুণের কথাও স্মরণ করেছেন। বলেছেন, প্রতিযোগীদের কঠোর সমালোচনাকেও সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করার ক্ষমতা অটলের থেকে শিক্ষণীয়। যে কারণে কংগ্রেসের মতো প্রধান বিরোধী দলও বাজপেয়ীর গুণগান করে।

মোদীর এই বক্তব্যে সহমত হয়েই পাল্টা আক্রমণে যাচ্ছেন বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, বাজপেয়ীর এই উদারতা কি শিখেছেন মোদী? শিখে থাকলে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতেন না, নেহরু-গাঁধী পরিবারের প্রতি লাগাতার বিষোদ্গারও চালিয়ে যেতেন না।

 

Find out more: