যদিও অমিত শাহ সিমলায় নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন তবুও গোটা দেশে এনআরসি করার কথা আজ অন্তত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখে শোনা গেল না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস অ্যান্ড কোম্পানি গুজব ছড়াচ্ছে যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে সংখ্যালঘু মানুষের নাগরিকত্ব যেতে চলেছে। রাহুল-বাবাকে চ্যালেঞ্জ করছি যে এই আইনে একটা জায়গাতেও কারও নাগরিকত্ব যাওয়ার নিদান থাকলে দেখিয়ে দিন। এই আইনে কোনও সংখ্যালঘুর নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেই।’’
প্রসঙ্গত, আগামিকাল দলের ১৩৫তম প্রতিষ্ঠা দিবসে ‘সংবিধান বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’-এর ডাক দিয়ে সব রাজ্যে সিএএ-এনআরসি-এনপিআরের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামবে কংগ্রেস। তার আগে আজ দলের প্রচারের সুর স্পষ্ট করে দিয়ে রাহুল গাঁধী ছত্তীসগঢ়ে বলেন, ‘‘এনআরসি, এনপিআর যা-ই বলুন, সবই ভারতের গরিব মানুষের উপরে মাসুল।’’
দেশ জুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এনআরসির বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পরে গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। অথচ তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহই বার বার গোটা দেশে এনআরসি করে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পরে মঙ্গলবার এক টিভি সাক্ষাৎকারে সুর বদলে অমিত বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ঠিক বলেছেন, এনআরসি নিয়ে সংসদে বা মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়নি।’’ এ-ও দাবি করেন, এনপিআর-এর সঙ্গে এনআরসি-র সম্পর্ক নেই। এর পরে গত কাল অমিত দিল্লিতে বক্তৃতা করেছেন। আজ ছিলেন শিমলায়। কিন্তু এনআরসি নিয়ে কোনও কথাই আর বললেন না।
বিজেপি নেতারা বলছেন, এনআরসি হবে না, এমন কোনও কথা প্রধানমন্ত্রীও বলেননি। অমিত শাহও বলছেন না। কংগ্রেস-বাম নেতারাও মনে করছেন, এনআরসি বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্বর কর্মসূচির অভিন্ন অঙ্গ। তা থেকে বিজেপি পিছু হটবে না। চাপের মুখে মোদী-অমিত শাহ দু’রকম কথা বলছেন। কিন্তু বিজেপি আসলে হিন্দুত্ব ও মেরুকরণের রাজনীতিতেই থাকবে। সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে শুধুমাত্র মুসলিমদের প্রতিবাদ ও আলিগড়-জামিয়া মিলিয়ার বিক্ষোভ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবে।
আজ সেই ইঙ্গিত দিয়েই পাকিস্তান থেকে আসা জঙ্গিদের ‘আলিয়া-মালিয়া-জামালিয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন অমিত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সনিয়া-মনমোহনের সরকার ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল। পাকিস্তান থেকে রোজ আলিয়া-মালিয়া-জামালিয়া ঢুকে আসত। জওয়ানদের মাথা কেটে নিয়ে যেত। প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে উফ্ শব্দও বের হত না।’’ একই সুরে বিজেপির মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের অভিযোগ, কংগ্রেস বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিয়ে নিজের ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করতে চাইছে।
এত দিন এনআরসি-র ‘ক্রনোলজি’ বা সময়পঞ্জি বোঝাতে অমিত শাহ বলতেন, প্রথমে নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন হবে। তারপর এনআরসি আসবে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়। গোটা দেশের জন্য আসবে। আজ অমিতকে কটাক্ষ করে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা টুইট করেছেন, ‘‘ক্রনোলজি বুঝে নিন। প্রথমে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেবেন। ক্ষমতায় আসবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি করবেন। দেশের সংবিধান নষ্ট করবেন। তার পর আপনারা প্রতিবাদ করলে মূর্খ বলবেন।’’
রাহুল তথা কংগ্রেসের লক্ষ্য, এই মেরুকরণের রাজনীতিতে পা না দিয়ে এনপিআর-এনআরসি নিয়ে আমজনতার সমস্যাকে তুলে ধরা। শাহের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কংগ্রেসের প্রশ্ন, রাহুল কোথায় বলেছেন যে নয়া নাগরিকত্ব আইনে নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার নিদান রয়েছে! নাগরিকত্ব আইনের মূল আপত্তি ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করা। নাগরিকত্ব খোয়ানোর বিষয় আসবে এনআরসি-তে। বিজেপি-র নেতা-মন্ত্রীরা নিজেদের সুবিধা মতো বিরোধীদের মুখে কথা বসিয়ে দিচ্ছেন।
এনআরসি-এনপিআরকে নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সঙ্গে তুলনা করে রাহুল আজ বলেন, ‘‘নোট বাতিলও গরিব মানুষের উপরে মাসুল ছিল। ব্যাঙ্কে যান, টাকা জমা করুন, নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলবেন না। এনআরসি-ও তেমনই। অফিসারদের কাছে যান, কাগজপত্র দেখান। নামে একটু ভুল থাকলে ঘুষ দিন। শেষে সেই গরিবের পকেটের টাকা বেরিয়ে যাবে।’’ জাভড়েকরের প্রশ্ন, ‘‘এনপিআর তো জনসংখ্যার রেজিস্টার। রাহুল গাঁধী কংগ্রেসের সভাপতি থাকার সময়ও উল্টোপাল্টা বলতেন। এখনও মিথ্যে বলছেন। উনি ২০১৯-এর ‘ঝুট অফ দ্য ইয়ার’-এর দাবিদার।’’