অভিনব উদ্যোগ ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ব্যবহারিক দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল । সংবিধান মতে, কেন্দ্র কোনো আইন পাশ করলে তা দেশের সব রাজ্যকে মানতে হবে । কিন্ত আবার সংবিধানেও একথা বলা হয়েছে রাজ্য সরকারের উপর কোনো বিশেষ বিষয় জোর করে কেন্দ্র চাপাতে পারবে না । যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো যাতে অটুট থাকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে কেন্দ্রকে । সেদিক থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে রাজ্যগুলির অবস্থান স্বাধীন । জণগন দ্বারা নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে কেন্দ্র কিছুই করতে পারবে না । এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে , তাই সেখানকার রাজ্য সরকারগুলির স্বাধীন সত্তা রয়েছে ।
তবে স্বাধীন ভারতে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র –রাজ্য বিবাদ এমন পর্যায়ে পৌছায়নি যাতে কেন্দ্রের পাশ করা কোনো আইন কার্যকর করতে অসুবিধা হয়েছে । এবার শুরু হল সেই সংঘাত । সংঘাত শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় , শেষ করলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন । সিএএ আইন রাজ্যে কার্যকর করা হবে না একথা মমতা বলেছেন । আর বিজয়ন রীতিমত বিধানসভার অধিবেশন ডেকে কেন্দ্রের করা সিএএ আইন বাতিল করার প্রস্তাব পাশ করলেন।
বিজেপি বিধায়ক তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজাগোপাল এ দিন বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘এই আইন প্রত্যাহারের দাবি সংকীর্ণতার লক্ষণ’’। তবে তাঁর বিরোধিতা ধোপে টেকেনি। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সিএএ বিরোধী সনদটি পাঠ করার সময়ে বলেন, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ক্ষুণ্ন করছে ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব প্রদানের আইনটি। তাঁর কথায়,‘‘সংবিধানের আদর্শের সঙ্গে এই আইনটির সরাসরি সঙ্ঘাত তৈরি হচ্ছে। দেশজোড়া উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এই আইন পাশ হওয়ায়। কেন্দ্রের উচিত ধর্মনিরপেক্ষতার খাতিরে এই আইন প্রত্যাহার করা।’’একই সঙ্গে বিজয়ন জানিয়ে দেন, কেরলে কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প হবে না।
কেরলের সিপিআই বিধায়ক জেমস্ ম্যাথিউ, সি দিবাকরণ এ দিনও সিএএ-এর নিন্দায় মুখর হন। তাঁদের মতে, সিএএ বিরোধিতার এই প্রস্তাব পাশ করে কেরল গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা দিল। কংগ্রেস নেতা ভিডি সতীশন এ দিন বলেন, ‘‘সিএএ, এনআরসি একই মুদ্রার দুই পিঠ। সংবিধানের ১৩, ১৪ ও ১৫ নং ধারাকে ক্ষুণ্ণ করছে এই আইন(সিএএ)’’।
স্বাধীন ভারতে এই প্রথম কেন্দ্রের করা কোনো আইনের বিরুদ্ধে কোনো রাজ্যের বিধানসভার অধিবেশন ডেকে তা বাতিল করার প্রস্তাব পাশ করা হল । যা একথায় নজীরবিহীন ।