মোদী সরকারের আর্থিক নীতির কড়া সমালোচনা করলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আর্থিক উপদেষ্টা মার্কিন অর্থনীতিবিদ স্টিভ হাঙ্ক । তিনি বলেছেন , ভারতের যা আর্থিক হাল তাতে ২০২০ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ নিয়ে যেতে হিমশিম খাবে মোদী সরকার । আর আর্থিক এই হালের জন্য মূলধনের অভিাবের কথা বলেছেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ ।
জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার নেমে দাঁড়িয়েছে ৪.৫ শতাংশ, যা ছ’বছরে সর্বনিম্ন। এই ফলাফল আসার আগে থেকেই অবশ্য অর্থনীতির ঝিমুনির ইঙ্গিত মিলছিল।
কিন্তু এই মার্কিন অর্থনীতিবিদের মতে মোদী সরকারের কোনো সদিচ্ছাই নেই। আর্থিক উন্নয়নের জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই হ্যাঙ্কের ব্যাখ্যা, ‘‘তার পরিবর্তে মোদী সরকার দু’টি বিষয়েই গুরুত্ব দিচ্ছে: ঐতিহ্য এবং ধর্ম, যা আসলে ধ্বংসাত্মক ও বিস্ফোরক।’’
জন হপিকন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হ্যাঙ্কের মতে, ‘‘ভারতে আর্থিক মন্দা ‘ক্রেডিট স্কুইজ’ ঋণ সঙ্কোচনের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা আসলে ধারাবাহিক একটি সমস্যা, পরিকাঠামোগত নয়। আর সেই কারণেই ২০২০ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে অনেক লড়াই করতে হবে।’’
এই ঋণ সঙ্কোচনের অর্থ হল, ব্যাঙ্কগুলি শিল্পক্ষেত্রে ঋণ দিতে চাইছে না, বা দিলেও মাত্রাতিরিক্ত সুদ দিতে হচ্ছে। এমনিতেই নন পারফর্মিং অ্যাসেট বা এনপিএ-র ভারে ন্যুব্জ ব্যাঙ্কগুলি। বিশেষ করে সরকারি ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। সেই এনপিএ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যাঙ্কগুলি শিল্পপতি-বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিতে চাইছে না। ফলে অবিশ্বাস ও ভয়ের বাতাবরণ ব্যাঙ্কিং মহলে। আর ঋণ না পেয়ে মুলধনের অভাবে নতুন শিল্প স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না শিল্পমহলও। তাই অর্থনীতিতে গতি আসছে না।
ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের শঙ্কা ও অবিশ্বাসের বাতাবরণ কাটাতে সিবিআই তদন্তের দাওয়াই দিয়েছেন নির্মলা সীতারামন। ব্যাঙ্ক কর্তাদের আশ্বস্ত করতে সিবিআই কর্তাদের সঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্তাদের এক টেবিলে নিয়ে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। হাঙ্কের মতে, এই সব পদক্ষেপে কাজ হবে না। দরকার সাহসী ও আমূল সংস্কারমুখী সিদ্ধান্ত। মোদী সরকার সেটাই করছে না বলে তোপ দেগেছেন হ্যাঙ্ক।
হাঙ্কের মতে ধর্ম বা ঐতিহ্যকে নিয়ে মাতামাতি না করে আর্থিক সংস্কারে মোদী সরকার ব্রতী হলে অবশ্যই আর্থিক অবস্থার মোকাবিলা করা সম্ভব হত । তা না করে ব্যাঙ্কিং সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে সিবিআই-র ডিরেক্টরের বৈঠক করানো হলে তাতে দেশের আর্থিক অবস্থা মহামারি কোনো পরিবর্তন হবে না বলে স্টিভ হাঙ্কের অভিমত ।