বুধবার দেশজুড়ে সাধারন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি । বামেরা আলাদা করে রাজ্যে খেতমজুর ধর্মঘট ডেকেছে । কিন্ত কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মতই মমতাও এই রাজ্যে বনধ ভাঙতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে । কেন এই নিয়ে আম জনতার মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে । বনধের দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান দাবি হল সিএএ প্রত্যাহার ও এরআরসি করা যাবে না । এই দুটি দাবিকেই মমতা সমর্থন করেন । তা সত্ত্বে কোন কারণে তিনি রাস্তায় নেমে বনধের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসন তা সাধারন মানুষ বুঝে উঠতে পারছেন না ।
অর্থনীতিতে মন্দা, কর্মসংস্থানের বেহাল দশা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধের প্রতিবাদ এবং সেই সঙ্গে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ও জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জির (এনপিআর) বিরোধিতায় আগামী কাল বুধবার দেশ জুড়ে ২৪ ঘণ্টার সাধারন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। একই দিনে গ্রামীণ ভারত ধর্মঘট ডেকেছে কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনগুলি। সিপিএম, কংগ্রেস-সহ ২০টি দল এ রাজ্যে ওই ধর্মঘটকে সমর্থন করছে। ধর্মঘটের ইস্যুগুলিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন করলেও, ধর্মঘট কোনও মতেই সমর্থন যোগ্য নয় বলে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মমতার এই অবস্থানকে ‘দ্বিচারিতা’ হিসেবেই দেখছে সিপিএম। একই সুর বিজেপির গলাতেও।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া রেলওয়ে মেন্স ফেডারেশন এবং ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান রেলওয়ে মেন (এনএফআইআর)। আশঙ্কা, আগামী কাল ধর্মঘটে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়তে পারে রেলপথে। পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতেই ওই নোটিস, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও বিষয়টি ভাল ভাবে নিচ্ছে না রেল কর্মচারীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, রেলের বেসরকারিকরণের প্রতিবাদ চলছে। এই ধর্মঘটে তারই প্রতিধ্বনী শোনা যাবে। মানুষের স্বার্থেই এই আন্দোলন। মোদী সরকার এই নোটিস জারি করে ধর্মঘট বাতিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
অন্য দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও মঙ্গলবার সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নোটিস জারি করেছে। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “ওদের ইস্যুগুলিকে সমর্থন করছি। কিন্তু ধর্মঘটকে সমর্থন করা যায় না।” হাইকোর্ট এ দিন একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির সময় রাজ্য সরকারকে ধর্মঘটের দিন আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিতে নজর রাখতে বলেছে।
বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী রাজ্য সরকারের এই ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসায় কেউ ধর্মঘট ডাকেনি। উনি ধর্মঘটের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারের হাত শক্ত করছেন, এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দ্বিচারিতার ছাড়া আর কী!”
তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বন্ধ আমরা সমর্থন করি না। বন্ধ শেষ অস্ত্র। বার বার ব্যবহার করে তা ভোঁতা করে দেওয়া হচ্ছে। এখনকার বিষয় নয়, আগে থেকেই আমরা ধর্মঘটের বিরুদ্ধে। তবে ইস্যুগুলোতে আমাদের সমর্থন রয়েছে।’’