বিভিন্ন রকমের মিছিল তো অনেক হল। এবার বাম কংগ্রেসের প্রস্তুতি রাজ্যকে কালো কাপড়ে মোড়ার। টার্গেট মোদীর দেড় দিনের কোলকাতা ভ্রমণ। রাজ্য জুড়েই আজ, শনি ও কাল, রবিবার প্রতিবাদীদের একটাই স্লোগান— ‘গো ব্যাক মোদী’!
শহরে পৌঁছে রাজভবনে ওঠার কথা প্রধানমন্ত্রী মোদীর। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হওয়ার কথা। তার পরে প্রধানমন্ত্রী যাবেন তাঁর সরকারি কর্মসূচিতে। এই সূচির কথা মাথায় রেখেই আজ, শনিবার দুপুর থেকে ধর্মতলা চত্বরে জমায়েতের ডাক দিয়েছে সিপিএম-সহ সব ধরনের বাম সংগঠন। ধর্মতলায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দও। প্রদেশ কংগ্রেসের ছাত্র ও যুব সংগঠনও আজ নানা জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ দেখাতে গেলে প্রশাসনের দিক থেকে যে কোনও রকম পদক্ষেপ হতে পারে ধরে নিয়েই সব শাখা সংগঠনকে তৈরি থাকার বার্তা শুক্রবার বৈঠক করে দিয়ে রেখেছেন সিপিএম এবং প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) প্রতিবাদে পথে নামলেও শাসক দল তৃণমূল সরাসরি মোদীর সফরকালে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিচ্ছে না। তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অবস্থান চলবে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো আসতেই পারেন। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও নানা জায়গায় যান। সরকারি কাজে প্রধানমন্ত্রী এলে স্বাগত। দলীয় কথা বললে নিশ্চয়ই যুক্তি দিয়ে প্রতিবাদ হবে।’’
সিপিএম এবং তাদের যুব ও ছাত্র সংগঠন ধর্মতলার লেনিন মূর্তির কাছে আজ জমায়েত করবে। এসইউসি সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল নিয়ে আসবে ধর্মতলায়। জমিয়তে কলকাতা-সহ রাজ্য জুড়েই বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছে। পরের দিন, রবিবার যখন মোদী নেতাজি ইন্ডোরের অনুষ্ঠানে থাকবেন, সে দিনও প্রতিবাদের প্রস্তুতি রাখছে তারা। জমিয়তের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, ‘‘এমন বিভাজনকারী প্রধানমন্ত্রী ভারত আগে দেখেনি। তাঁর সরকার যে পথে চলছে, তার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ভাবেই প্রতিবাদের বার্তা যাওয়া দরকার।’’ বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি, ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল এবং রাজভবনের সামনে প্রতিবাদ-অবরোধ কর্মসূচি নিয়েছে নাগরিক সংগঠনগুলি। যদিও মোদীর কপ্টারে বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্সে নামার কথা, প্রতিবাদীদের তরফে প্রসেনজিৎ বসুদের দাবি, তাঁরা রাজভবন চত্বর অবরুদ্ধ করে প্রতিবাদ জানাবেন।
সিএএ-এনআরসি নিয়ে প্রতিবাদের মাঝেই মোদী-মমতা সাক্ষাতের সম্ভাবনা বাম ও কংগ্রেসের বিক্ষোভে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সনিয়া গাঁধী এবং নরেন্দ্র মোদী— দু’দিক নিয়েই চলতে চাইছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এ বার মানুষকে ফাঁকি দিতে পারছেন না! দিল্লিতে বিরোধীদের বৈঠক বয়কট করে এখানে মোদীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করতে চাইছেন। তাঁর নেতৃত্বে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে, এর পরেও বিশ্বাস করতে হবে?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের মন্তব্য, ‘‘যে অজুহাতে বিরোধীদের ডাকা বৈঠক করলেন, সেটাই প্রকট হল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে। যে ‘সেটিং’ ভিতরে ভিতরে ছিল, সেটাই আবার বাইরে এসে গেল!’’ দেশ জুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে মোদীর সফর ‘কাঙ্খিত’ নয় বলেই মন্তব্য করেছেন এসইউসি,সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন এবং পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, পার্থ ঘোষ ও অনুরাধা পূততুণ্ড। মোদীর কুশপুতুল পুড়িয়েই তাঁরা প্রতিবাদ জানাবেন।