দুই রকম স্লোগানই উঠল কোলকাতা থেকে, গো ব্যাক মোদী থেকে গো ব্যাক মমতাও। রাজ্য সফরে আসা প্রধানমন্ত্রীর বিরুধ্যে স্লোগান চলছিল বিভিন্ন যায়গায়। ফেরার পথে বাধা পেয়ে স্লোগান উঠল মুখ্যমন্ত্রীর বিরুধ্যেও। নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীকে বিক্ষোভ দেখাতে শহরজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বাম, কংগ্রেস সহ একাধিক বিরোধী দল ও তাদের শাখা সংগঠনের। ভোর সাড়ে ৬ টা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য সব যাত্রাপথে সেই মতোই জমায়েত ছিল তাদের। মোদীর বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, কালো বেলুন আর কালো পোশাকে সেই বিক্ষোভ চলে সর্বত্র। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বিমানবন্দর থেকে কপ্টারে রেসকোর্সে এসে রাজভবনে চলে যান।
সন্ধ্যায় ধর্মতলার সেই বিক্ষোভ থেকেই বাম ছাত্রদের একটি মিছিল রাজভবনে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। তখনই রাণি রাসমনি অ্যাভিনিউর তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের মঞ্চে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন তারা। মমতা তাঁদের বলেন, আপনারা যে দাবিতে আন্দোলন করছেন, আমরাও সেই দাবিতে পথে আছি। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করুন।’’ বিক্ষোভকারী ছাত্রদের তরফে পাল্টা জানিয়ে দেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রী যদি তাঁদের দাবিকে সমর্থন করেন, তবে ব্যারিকেড সরিয়ে তাদের রাজভবনে যেতে দেওয়া হোক।
এদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী রাজভবনে পৌঁছলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে রানী রাসমনি রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অবস্থান মঞ্চে। নতুন নাগরিকত্ব আইন ( সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর বিরোধিতায় শুক্রবার থেকে অবস্থান শুরু করেছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্র গতকাল জেদ করে এনপিআর-এর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তা কাগজেকলমেই থাকবে। যতক্ষণ দেশের মানুষ চাইবে না, ততক্ষণ তা কার্যকর হবে না। আর এখানে আমরা তো কার্যকর করবই না।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, রাজভবনের বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও সে কথা জানিয়ে এসেছেন। বক্তৃতা সেরে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা বন্দরের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মিলেয়নিয়াম পার্কে চলে যান। সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মসূচি এদিনের মতো শেষ করে দেওয়া হয়। তখন অবশ্য ডোরিনা ক্রসিং, মেট্রো চ্যানেল, লেনিন সরণী পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে বিক্ষোভ চলছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলির। হঠাৎ সেই বিক্ষোভ থেকেই রাণী রাসমনি অ্যাভিনিউয়ের ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলে বামেরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান রাজভবনের দিকে। রাস্তার একপাশে তৃণমূলের সভামঞ্চ। অন্য পাশ দিয়ে সেই মিছিল পৌঁছে যায় সেই মঞ্চের একেবারে কাছে।
মিলেনিয়াম পার্কের অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফেরার পথে তখনই তৃণমূলের সেই অবস্থান মঞ্চে এসে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রীও। বারবার হাতে মাইক মিছিলের বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন মমতা। বাম ছাত্রদের শান্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা তো নরেন্দ্র মোদীকে ডেকে আনিনি। উনি এসেছেন। আমি রাজ্যের আর্থিক পাওনা নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম।’’ বিক্ষোভকারীরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেই স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ চিৎকার বলতে থাকেন, ‘‘মীরজাফর। মোদীর দালাল।’’
মুখ্যমন্ত্রী শন্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে বলায় ছাত্ররা পাল্টা বলতে শুরু করে, আপনার সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। মুখে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করলেও রাজ্যে এনপিআর-এর কাজ চলছে। আপনার দলের পুরসভাই এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এ সব নিয়ে বাম ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর তর্ক বেঁধে যায় মুখ্যমন্ত্রীর। মাইকেই মুখ্যমন্ত্রী সব ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল কর্মীরা অবস্থান মঞ্চে চলে আসতে বলেন। তার কিছুক্ষণ পরে দু’একটি মিছিলও অবস্থান মঞ্চের কাছে চলে আসে। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে মমতা বলতে থাকেন, ‘‘১০০-২০০ লোক এনে আমাকে চোখ রাঙাবেন না। আমি ডাকলে লাখ লাখ ছাত্র চলে আসবে। আমাকে ওভাবে ভয়ট দেখাবেন না। এই দেখলেন তো, কয়েক মিনিটে কত লোক চলে এল।’’
ততক্ষণে মঞ্চের প্রায় তিন দিকে বাম ছাত্রযুবদের ভিড়। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ঘিরে রাখেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার নেতৃত্বে মঞ্চ ঘিরে রাখে পুলিশের বিশাল বাহিনী। তারপর ফের বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই বিক্ষোভের কথা শুনেই আমি ফিরে এসেছি। যে দুটি পুরসভায় এনপিআর নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে তারা আমার কথা না শুনেই এই কাজ করেছে। সেই জন্য শো কজ করেছি।’’ তখনই বিক্ষোভকারী এক ছাত্র বলেন, ‘‘আপনি মোদীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে এসেছেন। আপনার কথা কেন শুনব?’’ তা শুনে মেজাজ হারিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘তুমি কে? তোমার কথার উত্তর দেব কেন?’’
ঘন্টা দুই এই পরিস্থিতি চলার পরে বিক্ষোভকারী পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে ফিরে আসেন মেট্রো চ্যানেলে। মুখ্যমন্ত্রীও তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরমঞ্চ থেকে বাড়ি ফিরে যান। আজ রবিবারও দিনভর একইরকম বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে বাম, কংগ্রেস সহ অন্য দল ও তাদের শাখা সংগঠনগুলির।