চলতি মাসের শুরুতেই কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। সেই বাজেট দীর্ঘ হওয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশ জুড়ে। কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। এরপরেই দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন নির্মলা সীতারমন। দেশে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে আজ সোমবার রাজ্যে বাজেট পেশ করবেন মমতার সরকার। আজ বেলা ২টোয় ২০২০-২১ আর্থিক বছরের রাজ্য বাজেট বিধানসভায় পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এবারও জনমুখী ও উন্নয়নের বাজেট করবে, এই আশায় রয়েছেন রাজ্যবাসী।
কেন্দ্রের এক লক্ষ্য কোটি টাকা বঞ্চনা সত্ত্বেও জনমুখী বাজেট উপহার দিল রাজ্য। সোমবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের রাজ্য বাজেট ঘোষণা পর সাংবাদিক সম্মেলন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিক্রিয়া দিলেন। তিনি বলেন, প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জনমুখী এক বাজেট উপহার দিল মা-মাটি-মানুষের সরকার।
মমতা বলেন, বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ প্রায় সর্বক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে। এই বাজেটে মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ২৫৫৬৭৭ কোটি টাকা। আমরা উচ্চশিক্ষায় ২০ গুণ বরাদ্দ বাড়িয়েছি। কৃষিক্ষেত্রে ১০ গুণ বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে ও ক্ষুদ্রশিল্পে বাংলা এখন এক নম্বরে। আবাসযোজনায় আমরা প্রথম স্থানে রয়েছি। কেন্দ্র জানিয়েছে, তিনটি ক্ষেত্রে বকেয়া টাকা দেবে না। তারপরও জনগণের দরকারের বাজেট করে দেখিয়ে দিয়েছি আমরা।
মমতা বলেন, অন্য রাজ্যের সঙ্গে শুধু তুলনা করলে হবে না। বাংলায় এখন জনসংখ্যা বেড়ে ১১ কোটি হয়েছে। তুলনা করার সময় সেই সংখ্যাটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা সবসময় জনমুখী বাজেট উপহার দিয়ে এসেছি। জনতার জন্য এই বাজেট। প্রতি পদক্ষেপে আমরা তা দেখিয়েছি। সর্বক্ষেত্রে আমরা ভালো কাজ করেছি। এমনকী আমরা ই-টেন্ডার ও ই-গভর্নেন্সেও ভালো কাজ করেছি। আমাদের ৬৬ লক্ষ ছাত্রী কন্যাশ্রীর আওতায় রয়েছে। এগুলোও মাথায় রাখতে হবে।
তারপর আমাদের সরকার সব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে। কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে কৃষ্ণনগরে। আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আদিবাসীদের জন্য বীরসা মুন্ডা ইউনিভার্সিটি হচ্ছে। আজাদ ইউনিভার্সিটি এবং আম্বেদকর ইউনিভার্সিটি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পাচ্ছে সাড়ে সাত কোটি মানুষ। যেখানে কেন্দ্রের আয়ুস্মান ভারতে পায় মাত্র দেড় কোটি মানুষ। আদিবাসীদের পেনশন প্রকল্প চালু করা হচ্ছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে জয় জহর প্রকল্প। বয়স্ক আদিবাসীদের জন্য বার্ধক্য ভাতা চালু করা হচ্ছে। তপশিলিদের জন্য বন্ধু প্রকল্পে প্রত্যেকে ১০০০ টাকা করে ভাতা পাবেন।
অসংগঠিত শ্রমিকরা নোটবন্দির জন্য সমস্যায় পড়েছেন। তাঁরা সামাজিক প্রকল্পে ২৫ টাকা করেও দিতে পারেননি। এবার থেকে সামাজিক প্রকল্পে শ্রমিকদের দেয় এই ২৫ টাকা করেও দেবে রাজ্য। গৃহহীন চা শ্রমিকদের জন্য চা-সুন্দরী প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। হাসির আলো প্রকল্পে তিন মাসে যাঁরা ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করে, তাদের জন্য বিদ্যুৎ খরচ একেবারে ফ্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কর্মসাথী প্রকল্পে বেকার যুবকদের জন্য ২ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।