রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের টিকিও খুঁজে পাওয়া গেল না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের ফলে। গেরুয়া শিবির বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম প্রার্থী দিয়ে জয়ের ধ্বনি খুঁজে পেয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। আর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উড়ছে লাল পতাকা।
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের গণনাই সবার আগে শেষ হয়। বেলা ১টার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় সেখানকার ফলাফল। ৩৯টি আসনের (Class Representative) মধ্যে মাত্র ৮টিতে ভোট হয়েছিল। কারণ অন্যগুলিতে ‘উই দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট’ (WTI) প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন আগেই। যে ৮ আসনের জন্য ভোট হয়, সেগুলিতেও এ দিন দাপট দেখান WTI প্রার্থীরাই।
বিজ্ঞান বিভাগে কেন্দ্রীয় প্যানেলের ভোটেও WTI প্রার্থীদেরই জয়জয়কার। সিপিএম ছাত্র সংগঠন এসএফআই(SFI) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে ঠিকই,কিন্তু কোনও দলের সঙ্গেই যোগ না রাখা ছাত্র সংগঠন WTI-এর চেয়ে অনেক পিছনে। বিজ্ঞান বিভাগে কেন্দ্রীয় প্যানেলে WTI পেয়েছে ১ হাজার ১৩টি ভোট। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা SFI পেয়েছে ২১৬। তৃতীয় স্থানে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও। তারা পেয়েছে ৩০টি ভোট। আর রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি পেয়েছে ৮টি ভোট। এই সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে WTI পেয়েছে ১ হাজার ১টি ভোট। SFI ২৩১, ডিএসও ৩০, টিএমসিপি ১০। সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে WTI পেয়েছে ৯০৬টি ভোট। SFI ২০৬। সান্ধ্য বিভাগের সহ সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে WTI পেয়েছে ১১২টি ভোট। SFI ৩৬। বিজ্ঞান বিভাগে এবিভিপি কোনও প্রার্থী দেয়নি।
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে জয়ী হয়েছে ডিএসএফ। নকশালপন্থী এই ছাত্র সংগঠন বরাবরই শক্তিশালী ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। শেষ নির্বাচনেও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সংসদের দখল ডিএসএফের হাতেই ছিল। এ বারও তারা দখল ধরে রাখল।
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কেন্দ্রীয় প্যানেলে জয়ী ডিএসএফ প্রার্থী পেয়েছেন ৩ হাজার ৩০৪ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে এবিভিপি। তারা পেয়েছে ৫০৮টি ভোট। তৃতীয় স্থানে এসএফআই, পেয়েছে ২৮৮টি ভোট। চতুর্থ টিএমসিপি। তারা পেয়েছে ৭৭টি ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী ডিএসএফ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৩ হাজার ৩২০। দ্বিতীয় স্থানে এবিভিপি, ৫২৮। তৃতীয় স্থানে এসএফআই, ২৬৫। চতুর্থ হয়েছে টিএমসিপি, ৭৬।তিনটি সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদেও ডিএসএফ প্রার্থীরাই জিতেছেন। দু’টিতে দ্বিতীয় স্থানে এবিভিপি। একটিতে দ্বিতীয় হয়েছে এসএফআই।
কিন্তু এই বিভাগে চমকে দিয়েছে গেরুয়া শিবির বিজেপি ঘনিষ্ঠ এবিভিপি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় প্যানেলে এই প্রথম বার প্রার্থী দিয়েছিল এবিভিপি। প্রথম বারেই তাদের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-ও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। এ বারের ভোটে এবিভিপি দু’নম্বরে উঠে এসে যে ভাবে এসএফআই-কে পিছনে ফেলে দিয়েছে, তাতে অনেকেই বিস্মিত।
কলা বিভাগের দখল অবশ্য ধরে রাখছে এসএফআই। আর এক বামপন্থী সংগঠন ডিএসএ-র সঙ্গে সেখানে এসএফআই-এর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ক্লাস ভিত্তিক লড়াই বা সেন্ট্রাল প্যানেল, সবেতেই কিছুটা করে এগিয়ে রয়েছে এসএফআই। তবে কলা বিভাগের ভোট গণনা মাঝ পথে থেমে গিয়েছে। এসএফআই এবং ডিএসএ-র সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার জেরে সেখানে বন্ধ করে দিতে হয়েছে গণনা।সবচেয়ে করুণ অবস্থা টিএমসিপির। যাদবপুরে টিএমসিপি আগেও লড়েছে, এ বারও লড়ছে। কিন্তু এ বার টিএমসিপির প্রাপ্ত ভোট যেখানে নেমেছে, রাজ্যের শাসক শিবিরের পক্ষে তা খুব একটা স্বস্তির খবর নয়।