আপ সরকার দিল্লিতে ভোট শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমার-সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করার অনুমতি দিয়েছে। যে কেজরিওয়াল  কানহাইয়ার বক্তৃতার প্রশংসা করে এই কেজরীবালই নরেন্দ্র মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন সেই তিনিই অবস্থান বদল করলেন। এই নিয়ে গত কাল রাত থেকেই সরব বিভিন্ন মহল। পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ এক ধাপ এগিয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘মহাশয় অরবিন্দ কেজরীবাল... কত দামে নিজেকে বিক্রি করলেন?’’ 

 

 

কানহাইয়া নিজে অবশ্য দিল্লি সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে টুইটারে লিখেছেন, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে মামলাটির বিচার হওয়া উচিত, যাতে ‘দেশদ্রোহ আইনের অপব্যবহার সম্পর্কে লোকে জানতে পারেন’। সেই টুইটকেই রিটুইট করেছেন অনুরাগ। কেজরীবালের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘আপনাকে আর কী বলব... মেরুদণ্ডহীন বলা মানেও প্রশংসা করা... আপনি তো নেই-ই... আপনার আপও এখন উধাও।’’ দিল্লির হিংসার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহেও আপ সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনুরাগ। টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘এই আম আদমি পার্টিই কি দিল্লির ভোটে জিতল? আপনি কোথায় অরবিন্দ কেজরীবাল? আপনার দিল্লি তো জ্বলছে। অমিত শাহেরা কি আপনাকে কিনে নিয়েছেন? নাকি আপনি নিজেই বিবেক বিক্রি করে দিয়েছেন?’’ কেজরীবালকে নিশানা করেছেন পি চিদম্বরম, জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠনও। 

 

২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র-মিছিলে দেশ-বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছিল অভিযোগ তোলে বিজেপি এবং এবিভিপি। তাদের আঙুল ছিল বাম ছাত্র সংগঠনের দিকে। কানহাইয়া, উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ একাধিক ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তাঁদের গ্রেফতারও করা হয়। কানহাইয়া তখনই জানিয়েছিলেন, তিনি ওই স্লোগান দেননি। তাঁর পাশে দাঁড়ায় দেশের সব ক’টি বিরোধী দল। পরে কানহাইয়া-রা জামিন পান। শনিবার কানহাইয়া বলেন, ‘‘পুলিশ প্রথম যখন চার্জশিট দিয়েছিল, তখন আমি বিহারে ভোটে লড়তে যাচ্ছি। এখন আবার বিহারে (বিধানসভা) ভোট আসছে।’’ এনআরসি-সিএএ-র বিরুদ্ধে গত এক মাস ধরে বিহারের বিভিন্ন জেলায় কানহাইয়ার সভায় ভিড় উপচে পড়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, ভয় পেয়েই তাঁকে আটকাতে মরিয়া বিজেপি এবং বিজেপিকে সাহায্য করতেই এই মামলায় সায় দিয়েছেন কেজরীবাল। 

 

সিপিআই জানিয়েছে, তারা রাজনৈতিক ও আইনি পথে বিষয়টি নিয়ে লড়বে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘দল নিশ্চিত, রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক মিথ্যে অভিযোগ থেকে কানহাইয়া মুক্ত হবেন।’ বিজেপি-বিরোধী অধিকাংশ দলই কেজরীবাল সরকারের উপরে ক্ষুব্ধ। অনেকেরই মতে, কেজরীবালের নরম হিন্দুত্বের মুখোশ খুলে গিয়েছে। ভোটের আগে শাহিন বাগ এড়িয়ে যাওয়া এবং দিল্লির হিংসার সময় মুখ বন্ধ রাখা তারই প্রমাণ। এ বার কানহাইয়াদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি দিয়ে তিনি নিজেকে বিজেপির ‘বি-টিম’ হিসেবে প্রমাণ করেছেন। কারও কারও এ-ও দাবি, কয়েক দিন আগে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকেই কানহাইয়াদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি দিয়েছেন ‘আম আদমি’ কেজরীবাল। 

 

Find out more: