১৫ দিন হয়ে গেল তাপস পাল আমাদের মধ্যে আর নেই। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ের বান্দ্রার এক হাসপাতালে মারা যান অভিনেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ তাপস পাল। তাঁর স্ত্রী নন্দিনী পাল স্বামীর মৃত্যু প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন। অভিযোগ করলেন, তাঁর স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি ন্যায়বিচার চান বলেও জানান নন্দিনী।
এই মুহূর্তে মুম্বইয়ে রয়েছেন তাপসের স্ত্রী। এ দিন সেখান থেকে ফোনে তিনি বলেন, “আমার স্বামীকে ওই হাসপাতাল মেরে ফেলেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাইতে মুম্বইয়ে এসেছি।”
নন্দিনীর কথানুযায়ী গত ১ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ তাপসকে তিনি বান্দ্রার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অভিযোগ, তাপসের অসুস্থতার সম্পর্কে বলতে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তা শুনতে রাজি হননি। উল্টে বলেন, রোগীর ‘পাস্ট হিস্ট্রি’ শুনতে তিনি উৎসাহী নন। অভিযোগ, অসুস্থ তাপস পালকে দেখে ওই চিকিৎসক নন্দিনীকে প্রশ্ন করেন, “আপনি কেন ওঁকে হাসপাতালে এনেছেন?” এমনকি ৫০ হাজার টাকা জমা না করলে তাপসের চিকিৎসা শুরু করা হবে না বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয় বলে নন্দিনীর অভিযোগ। কিন্তু মাঝরাতে তাঁর কাছে অত টাকা না থাকায় মেয়ের বাড়িওয়ালার সাহায্যে টাকার বন্দোবস্ত করে তাপসকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয় বলে দাবি নন্দিনীর!
৭ ফেব্রুয়ারি তাপস পালের ভেন্টিলেশন খুলে দেওয়া হয়। তাপস তখন একেবারেই সুস্থ ছিলেন বলে দাবি করে তাঁর স্ত্রী এ দিন বলেন, “আমার দিকে তাকিয়ে ও হাসল। বলল, বাপরে তুমি যা করলে! আমি বলেছিলাম, তুমি একদম ঠিক আছো।”
এর পর থেকেই সমস্যা শুরু হয় বলে অভিযোগ করে নন্দিনী জানান, ঠিকমতো খেতে দেওয়া হত না তাপস পালকে। নার্সরা ক্যাফেটেরিয়া থেকে খাবার এনে খাওয়াতে বলত। এ নিয়ে তাঁর মেয়ের সঙ্গে এক দিন নার্সদের ঝামেলাও হয়ে বলে নন্দিনীর অভিযোগ। তাঁর আরও দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ফের অসুস্থ হয়ে যান তাপস পাল। আমার সম্মতিতেই ডায়ালিসিস শুরু হয়। নন্দিনী এ দিন বলেন, “হঠাৎ দেখি তাপসকে এক দিন বেঁধে রেখেছে। কেন জানতে চাওয়ায় ওঁরা বলেন, এখন শিফ্টিং চলছে। ওঁকে কারও নজরে রাখা সম্ভব নয়।”
এই পরিস্থিতিতেই তাঁরা ঠিক করেন,১৭ ফেব্রুয়ারি তাপসকে নিয়ে কলকাতায় ফিরবেন। কিন্তু সে দিন রাতেই সব ওলটপালট হয়ে যায় বলে দাবি করেন তিনি। নন্দিনীর দাবি, ওই দিন হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয় তাপস পালের হিমোগ্লোবিন কমে ৩.৫ হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “ওই দিন সকালেই আমি দেখেছি তাপসের হিমোগ্লোবিন ৯। আশ্চর্য রকম ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমতির জন্য অপেক্ষা না করেই ওকে রক্তও দেননি। এর পর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। পর পর। তখনও সিনিয়র কোনও ডাক্তার নেই। এক জন ট্রেনি আর অন্য এক ডাক্তার।”
গোটা ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন নন্দিনী। তিনি বলেন, “তাপসের সম্পর্কে এত অন্যায়, এত ভুল কথা শুনতে হয়েছে যে, মেয়ে এবং আমি আর পেরে উঠছি না। তবে এই মৃত্যুর বিচার আমি চাইবই। ছাড়ব না।”