ননীবালা দেবী : বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দি। জন্ম ১৮৮৮ সালে, হাওড়া জেলার বালিতে। বাবা সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মা গিরিবালা দেবী। ১৮৯৯ সালে মাত্র এগারো বছর বয়সে বিয়ে। পাঁচ বছরের মাথায় ১৯০৪ সালে স্বামী মারা যান। তাঁর বয়স তখন মাত্র ষোলো। এর পর তিনি তাঁর বাবার কাছেই ফিরে আসেন। চারদিকে তখন দেশপ্রেমীদের উপর ব্রিটিশের পৈশাচিক অত্যাচার। এই সময়ই বিপ্লবী অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বিপ্লবের দীক্ষা পেলেন বাল্যবিধবা ননীবালা দেবী। অনেক কাছের মানুষও টের পেল না যে তিনি বিপ্লবী দলের সক্রিয় সদস্য। রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে, তাঁর সঙ্গে প্রেসিডেন্সি জেলে পিস্তলের খোঁজ আনতে গিয়েছিলেন ননীবালা দেবী। তখন বাঙালি বিধবাদের পক্ষে সিঁদুর মাথায় এ রকম পরের স্ত্রী সেজে জেলে গিয়ে কাজ হাসিল করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না। পরে নানা ভাবে স্বাধীনতার যুদ্ধে নিজেকে মেলে ধরেছেন, গ্রেফতার হয়েছেন। দুই বছর এই ভাবে বন্দিজীবন কাটিয়েছিলেন। ১৯১৯ সালে মুক্তির আদেশ এলো। জেল থেকে ফিরে এসে বালিতে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে তিনি ঠাঁই পেলেন না। উত্তর কলকাতার এক বস্তিতে আশ্রয় নিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় কুড়ি বছর পরে ১৯৬৭ সালের মে মাসে তিনি মারা যান।

বীণা দাস : ১৯১১ সালে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম। তাঁর বাবা ছিলেন ব্রাহ্মসমাজী পন্ডিত ও দেশপ্রেমিক বেণী মাধব দাস ও মা সরলা দাস। তার দিদি ছিলেন বিপ্লবী কল্যাণী দাস। পিতার আদর্শে প্রভাবিত হয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীশ ভৌমিকের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। এক বিপ্লবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কারণে স্বাধীন ভারতের হয়ে লড়ার শক্তি পেয়েছিলেন পরিবার থেকে। অসহযোগ ও জাতীয় আন্দোলনের যোগ দেওয়ার কারণে তার দাদা কারাবরণ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনৈতিক মনস্ক হয়ে ওঠেন। ৯ বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর বীণা দেবী আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যান রাজনীতি থেকে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। ১৯৮৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর। হরিদ্বারে গঙ্গার ঘাটে এক অজ্ঞাতপরিচয় বয়স্কা মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। সংবাদপত্রেও খবরটি উঠেছিল। পরে অজ্ঞাতনামা নারীর পরিচয় জানা গিয়েছিল। সেই নারী ছিলেন অগ্নিকন্যা বীণা দাস।

মাতঙ্গিনী হাজরা : ১৮ বছর বয়সে স্বামীকে হারান মাতঙ্গিনী, এবং ১৯০৫ সাল থেকে গান্ধীবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে যোগ দেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে লবণ আইন ভঙ্গের অপরাধে গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৪২ সালে 'কুইট ইন্ডিয়া' আন্দোলনের অন্তর্গত কর্মসূচি ছিল মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন থানার দখল নেওয়ার পরিকল্পনা। সেইমতো তমলুক থানা অভিমুখে প্রায় ৬.০০০ মানুষের মিছিলের নেতৃত্ব দেন মাতঙ্গিনী। মিছিল আটকাতে গুলি চালায় পুলিশ, মাতঙ্গিনীর গায়ে লাগে তিনটি গুলি। তবু এগিয়ে চলেন তিনি, যতক্ষণ না মৃত্যু গ্রাস করছে তাঁকে। থানার সামনে যখন পড়ে আছে তাঁর নিথর দেহ, হাতে তখনও ধরা জাতীয় পতাকা।

Find out more: