দেশজুড়ে চলছে মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti) বা পৌষ সংক্রান্তির (Poush Sankranti) স্নান। কেন এই দিনটিকে এত পবিত্র মনে করা হয়? মকর সংক্রান্তি শব্দের অর্থ হল, সূর্যের (Makar) মকর রাশিতে প্রবেশ। অর্থাৎ ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী সংস্কৃত শব্দ সংক্রান্তি অর্থে সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। ১২টি রাশি অনুযায়ী এরকম মোট ১২টি সংক্রান্ত আছে। পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ করে এই দিনটিকে একটি পুণ্যদিন হিসেবে পালন করা হয়। পূর্বের চাষ পদ্ধতি অনুযায়ী এই দিনটিতেই নতুন চাল, গুড়, নারকেল দিয়ে ধানের গোলা পুজো করার রীতি ছিল। এছাড়া, যে কোনও জলাশয়, নদী বা সঙ্গমে স্নান করে সূর্যপ্রণাম করলে মোক্ষযোগ লাভ হলেও হিন্দুদের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে।

এদিন ভোররাত থেকে গঙ্গাসাগরে (Gangasagar) চলছে পুণ্যস্নান। লক্ষ লক্ষ ভক্ত সাগরজলে ডুব দিয়ে মোক্ষ লাভের আশায় পুজো করছেন। কেউ কেউ বৈতরণী পার করে নিচ্ছেন এখনই। সকাল থেকেই কপিল মুনির (Kapil Muni) আশ্রমে দীর্ঘ লাইন পড়ে গিয়েছে। সাগরে স্নান সেরে মন্দিরে পুজো দিয়ে দুপুরের মধ্য ঘরমুখো হতে চান অনেকেই।

গঙ্গাসাগরের পাশাপাশি কলকাতা ও হাওড়ার বাবুঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে চলছে মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৩ মিনিট থেকে স্নানের সময় শুরু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে এই পুণ্যস্নানের যোগ। যাঁরা গঙ্গাসাগর যেতে পারেননি, তাঁরা বাবুঘাটের গঙ্গায় সারছেন পুণ্যস্নান। ভোরবেলা থেকে গঙ্গার ঘাটগুলিতে উপচে পড়া ভিড়। পুণ্যার্থীদের জন্য নিরাপত্তারক্ষায় রয়েছে রিভার ট্রাফিক পুলিশ, এনডিআরএফের কর্মীরা।
মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে গঙ্গায় স্নান শুরু হয়েছে বহরমপুরেও। রবিবার সকাল থেকেই বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ ঘাটে গঙ্গানদীতে ভক্তদের ভিড় শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড কুয়াশা, শীত উপেক্ষা করেও পুণ্যলাভের আশায় ভক্তরা স্নান করছেন। অন্যদিকেন প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কেন্দুলির জয়দেব মেলায় প্রতি বছরের মতো এবছরও মকর সংক্রান্তির দিন পুণ্যস্নান চলছে। প্রতিবছর এই মেলাকে ঘিরে মানুষের মধ্যে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়।

বীরভূমের অজয় নদের পাড়ে ছোট্ট গ্রাম কেন্দুলি। মেলা চলবে আগামী তিনদিন। কথিত আছে কবি জয়দেব প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন কাটোয়ার গঙ্গায় পুণ্যস্নানে যেতেন। কোনও একবছর কবি অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাটোয়ায় গঙ্গাস্নানে যেতে পারেননি। দেবী গঙ্গার স্বপ্নাদেশে কবি জয়দেব অজয়ে পুণ্যস্নান সারেন। তারপর থেকেই জয়দেব মেলা হয়ে আসছে তাঁর স্মৃতিতে।

বীরভূম-বর্ধমান জেলার সীমান্ত বরাবর বয়ে চলা অজয় নদের ধারে কেন্দুলি গ্রাম। এখানেই ছিল রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেবের নিবাস। রাধাবিনোদ সহ কেন্দুলিতে জয়দেবের স্মৃতিধন্য বহু দ্রষ্টব্য থাকলেও কেন্দুলির সব চেয়ে বড় পরিচয় পৌষ সংক্রান্তির মেলা। যাকে কেন্দ্র করে কেন্দুলির কথা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়েছে। প্রাচীনত্ব ও জনপ্রিয়তার নিরিখে এ মেলা আজ দেশের অন্যতম প্রধান মেলা হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রতিবছর সমাগম হয় লক্ষাধিক মানুষের।

অজয় নদে মকর সংক্রান্তির দিনে পুণ্যার্থীরা স্নান করেন। এই সময় নদীতে জল কম থাকে। সেই কারণে প্রতিবছর প্রশাসন থেকে বালি তুলে জল জমানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ডুব দেওয়ার জন্য পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা ঘাট বানানো হয় প্রতিবছর।
জয়দেব মেলা মানেই বাউলের আখড়া। সেই সঙ্গে অবশ্যই কীর্তন। প্রতিবছর এই মেলায় তৈরি করা হয় কীর্তনের আখড়া এবং বাউলদের জন্য বাউলের আখড়া। এবছরেও প্রায় ৩০০টি আখড়া তৈরি করা হয়েছে মেলায়। বীরভূম জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, এই রাজ্যে জঙ্গি ধরা পড়ায় নিরাপত্তা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বাড়ানো হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ কর্মী থাকছে মেলায় নিরাপত্তার জন্য। নিরাপত্তার জন্য ঘাটে বসানো হয়েছে সিসিটিভি। এছাড়াও অ্যান্ট ক্রাইম টিম থাকছে মেলায়।

জয়দেব মেলা উপলক্ষে দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডে পুণ্যার্থীদের ঢল। শনিবার ও রবিবার কেন্দুলি জয়দেবের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ৯ হাজার পুণ্যার্থী। আর প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। মোটের উপর ৫৫টি বাস চলাচল করবে দুর্গাপুর থেকে জয়দেবের জন্য।

Find out more: